মহামারী করোনা ও দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি

জুবায়ের আহমেদ: গতকাল ১০ ডিসেম্বর ছিলবিশ্ব মানবাধিকার দিবস।বিশ্বের মানুষদের অধিকার সম্মুন্নত রাখতে গন সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রতি বছর ১০ ডিসেম্বর কেবিশ্ব মানবাধিকার দিবসহিসেবে পালন করা হয়ে থাকে।১৯৪৮ সাল থেকে দিবস পালন শুরু হয়।একটি সুষ্ট সমাজ বিনির্মানে মানবাধিকারের সুরক্ষা নিশ্চিত করা আবশ্যক।যে দেশে মানবাধিকার সুরক্ষা যত বেশি নিশ্চিত করা হয় সে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি তত উন্নত হয়।

২০২০ সালের বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির দিকে থাকালে দেখা যায় দেশের অবস্থা কতটা করুন।বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্তিতি কোন কালেই তেমন ভালো না থাকলেও গত এক দশকে বর্তমান আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে ধারণাতীত।ফ্যাসিবাদী সরকার নিজেদের কর্তৃত্ব বজায় রাখতে বিরোধী দলীয় নেতাকর্মী,সমালোচকসহ ভিন্ন মতাবলম্বীদের দমনে আইনের অপপ্রয়োগ করছে দেদারছে।

সরকারের হুমকি-ধামকির কারণে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও মৌলিক অধিকার সুরক্ষায় কাজ করা গনমাধ্যম আজ হুমকির সম্মূখিন।

মহামারী করোনাকালীন সময়েও দেশের মানবাধিকার পরিস্হিতির উন্নতির বালাই ছিল না ।বরং আরো বেশি অবনতি হয়েছে।

বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড,গুম,আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নির্যাতন যেন কমছেই না।সরকার সাংবাদিক, লেখক, অনলাইন এক্টিভিস্টসহ ভিন্ন মতাবলম্বীদের শায়স্হা করতে ব্যাপকভাবে সমালোচিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ব্যবহার করছে।

বর্তমান সময়ের জনপ্রিয় যোগাযোগ মাধ্যম স্যোসাল মিডিয়ায় সরকার,মন্ত্রী বা এমপিদের নিয়ে সমালোচনা করলেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা ঢুকে দেয়া হচ্ছে।অনেকে স্যোসাল মিডিয়ায় পোষ্ট বা মন্তব্য করতে ভয় পান বা পোস্ট বা মন্তব্য করতে দুএক ভাবেন আগে। সাংবাদিকরাও সরকার দলীয় প্রভাবশালীদের নানা দুর্নীতির খবর করতে গিয়ে মামলা খেয়ে জেলে কাটছেন এমন উদহারণ অহরহ। এভাবে মানুষের বাক স্বাধীনতা রদ্ধ করার প্রতিবাদ করে আসছে দেশীবিদেশী মানবাধিকার সংগঠনগুলো।

গতকাল (১০ ডিসেম্বর)বিশ্বের সাতটি মানবাধিকার সংস্হা এক যৌথ বিবৃতিতে বলেছেকরোনাকালীন সময়েও আওয়ামী কর্তৃত্ববাদী সরকার সমালোচক মুক্ত সংবাদ মাধ্যমের উপর কঠোর চাপ প্রয়োগ করছে।এসব মানবাধিকার সংগঠনগুলো হলো, এশিয়ান ফেডারেশন অ্যাগেইনস্ট ইনভলানটারি ডিসঅ্যাপিয়ারেন্স, এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশন, এশিয়ান নেটওয়ার্ক ফর ফ্রি ইলেকশনস, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, রবার্ট এফ কেনেডি হিউম্যান রাইটস এবং ওয়ার্ল্ড অর্গানাইজেশন অ্যাগেইনস্ট টর্চার।তারা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে বাংলাদেশের মানবাধিকার সংরক্ষনে শক্ত অবস্হান নেয়ারও আহবান জানান।

এছাড়া গত ২০ নভেম্বর যুক্তরাজ্য সরকারও এক বিবৃতিতে বাংলাদেশের সার্বিক মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।বিবৃতিতে দেশটিতে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা খর্ব এবং জিডিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলাসহ বিভিন্ন নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগের কথাও উল্লেখ করা হয়।

দেশীয় মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী,এ বছরের জানুয়ারি থেকে গত ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত দেশে ২২০ জন বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। এদের বেশিরভাগ ঘটনা ঘটেছে বছরের প্রথম তিন থেকে চার মাসে।হয়রানির শিকার হয়েছেন ২৩৩ জন সাংবাদিক।এরমধ্যে ২ জন হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। নিখোঁজ হয়েছেন এক জন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হুমকির শিকার হয়েছেন ৩৯ সাংবাদিক। এর মধ্যে ১৯ জন সরকার সমর্থিতদের কাছে হুমকির শিকার হয়েছেন।

জুবায়ের আহমেদ: সাংবাদিক,কলামিষ্ট ও মানবাধিকার কর্মী।

error: