করোনা মহামারির কারণে ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’ স্থগিত করার যে সিদ্ধান্ত বাংলা একাডেমি নিয়েছে সেটির কড়া সমালোচনা করছেন লেখক ও প্রকাশরা।
তারা প্রশ্ন তুলছেন, বাংলাদেশে শপিং মল, কলকারখানা ও গণপরিবহন সহ সবই যেহেতু স্বাভাবিক নিয়মে চলছে সেক্ষেত্রে কেন বই মেলা বন্ধ রাখা হবে?
বাংলা একাডেমির অন্যতম পরিচালক ড: জালাল আহমেদ বলেন, ‘বইমেলা আয়োজনের জন্য তারা আরো আগে থেকেই প্রস্তুতি নেয়া শুরু করেছিলেন। তাদের আশা ছিল করোনা সংক্রমণের পরিস্থিতির হয়তো উন্নতি হবে। কিন্তু পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় বাংলা একাডেমি ভিন্ন চিন্তা করতে বাধ্য হয়েছে।
আমাদের নির্বাহী পরিষদ বাংলা একাডেমির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী প্রতিষ্ঠান, সেটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে করোনা পরিস্থিতির অবনতি ঘটায় আপাতত বইমেলা স্থগিত থাকবে। পরিস্থিতির উন্নতি হলে আমরা আবার বইমেলা শুরু করবো।’
তবে ফেব্রুয়ারি মাসে একটি ভার্চুয়াল বইমেলা আয়োজন করা যেতে পারে বলে মনে করছে বাংলা একাডেমি।
লেখক ও প্রকাশকরা বলছেন, বইমেলার প্রকৃত আবহ ভার্চুয়াল বইমেলার মাধ্যমে পাওয়া সম্ভব নয়।
ভার্চুয়াল বইমেলার ব্যাপারে লেখক সাদিয়া নাসরিন বলেন, ‘বইমেলা শুধু বই কেনা-বেচার জায়গা নয়। এটি লেখক ও পাঠকের মধ্যে যোগাযোগেরও জায়গা। এখানে আড্ডা হয়, গল্প হয়। এতবড় একটি জিনিস অনলাইনে করা সুন্দর বা সুখময় কিছু হবে বলে আমার মনে হয় না।’
তবে প্রকাশকরা মনে করেন, একটু পরিকল্পনা গ্রহণ করলেই বইমেলা আয়োজন করা সম্ভব।
জাগৃতি প্রকাশনীর কর্ণধার রাজিয়া রহমান বলেন, প্রতি বছর বইমেলার জন্য প্রকাশকরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেন। এ জন্য নতুন প্রকাশিতব্য বইয়ের পাণ্ডুলিপি এর মধ্যেই প্রস্তুত হয়ে গেছে। লেখক ও প্রকাশকরা বইমেলাকে কেন্দ্র করে তাদের পরিকল্পনা গ্রহণ করে। সেক্ষেত্রে প্রতি-ঘণ্টায় কতজন দর্শনার্থী মেলা প্রাঙ্গণে ঢুকতে পারবে সেটি নিশ্চিত করার জন্য অনলাইন রেজিস্ট্রেশন ব্যবস্থা চালু করা যেতে পারে। স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করতে পারলে বইমেলা আয়োজনে কোনো সমস্যা হবে না।
তিনি বলেন, ‘মেলা প্রাঙ্গণে গিয়ে বইমেলার যে আবহ সেটা তো ভার্চুয়াল বই মেলায় সম্ভব নয়। যেহেতু সবকিছুই চলছে অন্য কোনো পণ্য বেচা-কেনায় কোনো বাধা নেই। সবগুলো মার্কেট খোলা আছে, উড়োজাহাজ থেকে শুরু করে বাস, ট্রেন সবই চলছে। শুধু বইমেলা বন্ধ রেখে কী লাভ?’
বাংলা একাডেমির কর্মকর্তাদের মতে, অন্য যেকোনো জায়গার তুলনায় বই মেলায় লোক সমাগম বেশি হয়। এমন অবস্থায় করোনা সংক্রমণ আরো বেশি ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
বাংলা একাডেমির অন্যতম পরিচালক ড: জালাল আহমেদ বলেন, ভার্চুয়াল বইমেলা সংক্রান্ত বাংলা একাডেমির সিদ্ধান্ত সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। বিষয়টি মন্ত্রণালয় অনুমোদন করলে বাংলা একাডেমি সেটি বাস্তবায়নের দিকে এগিয়ে যাবে। তবে ভার্চুয়াল বইমেলা কীভাবে আয়োজন করা হবে সেটির বিস্তারিত এখনো ঠিক হয়নি। এ জন্য একটি সফটওয়্যার বানানোর কাজ এরই মধ্যে শুরু হয়েছে।
সূত্র : বিবিসি