বিশ্বজুড়ে ইংরেজি নববর্ষ উদযাপনে করোনার প্রভাব

নতুন করে করোনাভাইরাসের প্রকোপ নিয়ন্ত্রণে লড়াই করে যাচ্ছে বিশ্বের অনেকগুলো দেশ। তাই এবারের নতুন বছর উদযাপনে সারা বিশ্বজুড়েই কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে।

সিডনি থেকে নিউইয়র্ক পর্যন্ত প্রায় সবখানেই আতশবাজি প্রদর্শন ও অন্যান্য জনসমাগম বাতিল করা হয়েছে।

নতুন করে করোনাভাইরাসের ব্যাপক সংক্রমণের ভয়ে উদযাপনকে বিশেষভাবে বন্ধ করা হয়েছে পুরো ইউরোপে।
ফ্রান্স সরকার নববর্ষের অনুষ্ঠানগুলো ভেঙ্গে দিতে এক লাখ পুলিশ মোতায়েন করেছে এবং শহরগুলোতে রাতের বেলা কারফিউ জারি করেছে।

এক বছর আগে শুরু হওয়া এই মহামারি ভাইরাসে বিশ্বজুড়ে এখন পর্যন্ত ১.৮ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ মারা গেছে। আক্রান্ত হয়েছে ৮১ মিলিয়নের বেশি মানুষ।

এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলোতে নববর্ষের উদযাপন
নববর্ষ উদযাপনে প্রথম সারির দেশ অস্ট্রেলিয়া। নববর্ষ উপলক্ষে সিডনিতে আতশবাজি প্রদর্শন চলছে। তবে প্রদর্শন উপভোগ করতে শহরের বন্দরে ভিড় করতে দেয়া হবে না।

নিউ সাউথ ওয়েলসের প্রধান গ্লাডিস বেরেজিক্লিয়ান জানান, নতুন বছর উদযাপনে আমরা বড় ধরণের কোনো অনুষ্ঠান আয়োজন করতে চাই না।

শহরে অবস্থানরত বিবিসির ফিল মার্সার জানান, সিডনির বেশিরভাগ বাসিন্দাই ঘরে বসে টিভিতে নববর্ষের ঝঁমকালো উদযাপন দেখবে। এই উদাযাপনগুলো মাত্র পাঁচজন অতিথিতে সীমাবদ্ধ।

চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে বার্ষিক নববর্ষ লাইট শো বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। দেশজুড়ে শহরগুলোতে নববর্ষের উদযাপনকে সীমিত করা হয়েছে।

জাপান নতুন বছরের একটি ঐতিহ্যবাহী অনুষ্ঠান বাতিল করেছে যেখানে সম্রাট নারুহিতো ও রাজপরিবারের অন্যান্য সদস্যরা জনগণকে অভ্যর্থনা জানিয়ে থাকেন।

ভারতের দিল্লিসহ বেশ কয়েকটি শহরে নববর্ষের বৃহত্তর জনসমাগম বন্ধে রাতের বেলায় কারফিউ জারি ও অন্যান্য বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।

অন্যদিকে নিউজিল্যান্ডে কঠোর লকডাউন এবং সীমান্ত বন্ধ থাকায় কোভিড পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। তাই নতুন বছরের অনুষ্ঠানুগলো যথারীতি অনুষ্ঠিত হবে।

ইউরোপের কী হাল?
ফ্রান্স সরকার বৃহস্পতিবার রাত ৮টায় শহরগুলোতে কারফিউ জারির পর থেকে শহরাঞ্চলে দৃশ্যমান নিরাপত্তা জোরদারের আদেশ দিয়েছে। প্যারিসে সন্ধ্যায় অর্ধেক মেট্রোলাইন বন্ধ হয়ে যাবে।

ফ্রান্সজুড়ে দু’টি লকডাউন চলছে। নতুন বছরের শুরুতে বার, রেস্তোঁরা এবং সাংস্কৃতিক আকর্ষণীয় স্থানগুলো বন্ধ থাকবে।

ইংল্যান্ডে করোনাভাইরাসের নতুন ধরণ ছড়িয়ে পড়েছে এবং সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলগুলোতে প্রায় দুই কোটি মানুষ ঘরে অবস্থান করতে বাধ্য হচ্ছে। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন জনগণকে বিধিনিষেধ মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছেন।

বুধবার তিনি বলেন, ‘এর মানে হলো একই বাড়িতে বা সাপোর্ট বাবলে না থাকলে বন্ধু বা পরিবারের সাথে সাক্ষাত না করা এবং যেকোনো ধরণের বড় সমাবেশ এড়িয়ে চলা।’

মেট্রোপলিটন পুলিশ লন্ডনে সম্ভাব্য ফুর্তিবাজদেরকে ‘নিজেদের বাড়িতে থেকে নতুন বছর উদযাপন করার’ জন্য সতর্কবাণী দিয়েছে।

আয়ারল্যান্ড বৃহস্পতিবার দেশটির সর্বোচ্চ পর্যায়ের বিধিনিষেধ জারি করবে। সমস্ত বাড়ির পরিদর্শন নিষিদ্ধ করবে, সমস্ত অপ্রয়োজনীয় খুচরা দোকান বন্ধ করবে এবং ৫ কিলোমিটারের (তিন মাইল) বেশি ভ্রমণ নিষিদ্ধ করবে।

জার্মানিতে লকডাউন চলবে ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত। দেশটির সরকার আতশবাজি বিক্রি নিষিদ্ধ করেছে এবং নির্দিষ্ট সংখ্যার বেশি জনগণের ভিড় জমাতে কড়া বিধিনিষেধ আরোপ করেছে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জেনস ইস্পাহান বলেছেন, জার্মানি এবার ইতিহাসের ‘সবচেয়ে শান্ত নববর্ষের উদযাপন’ করবে।

নেদারল্যান্ডসেও চলছে লকডাউন। যা ১৯ জানুয়ারি পর্যন্ত জারি থাকবে। এবার নববর্ষের সাধারণ কাউন্টডাউন হবে আমস্টারডামের একটি ফুটবল স্টেডিয়ামের বন্ধ দরজার ভেতরে।

তুরস্ক নতুন বছরের শুরুতেই চার দিনব্যাপী লকডাউন শুরু করবে।

যুক্তরাষ্ট্রে নববর্ষের উদযাপন
যুক্তরাষ্ট্রের অনেক রাজ্য ও শহরে উৎসবের উপর বিধিনিষেধ জারি করেছে মার্কিন কর্মকর্তারা। নিউ ইয়র্কে আলোকোজ্জ্বল টাইমস স্কয়ার বলটি মধ্যরাতে প্রথাগত কাউন্টডাউন চলার সময় নামানো হবে। তবে ওই এলাকায় সাধারণ মানুষকে ঢুকতে দেয়া হবে না।

সান ফ্রান্সিসকো এবং লাস ভেগাসসহ বিভিন্ন শহরে আতশবাজি নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

সূত্র : বিবিসি

error: