বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড: মামলামৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামিকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে

১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের শেষের দিকে পাকিস্তান হানাদার বাহিনী যখন বুঝতে পেরেছিল তাদের পরাজয় অনিবার্য, তখন বাংলাদেশকে পঙ্গু করার ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে দেশের সূর্যসন্তান তথা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, সাংবাদিকসহ অন্যান্য বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করার এক নৃশংস পরিকল্পনা করা হয়। এই কাজে সহায়তা করে পাকিস্তানের দোসর দেশীয় অপশক্তি আলবদর ও আলশামস; যারা বুদ্ধিজীবীদের ধরিয়ে দিতে এবং মেরে ফেলার কাজে সহায়তা করে। এমন দুজন হচ্ছেন চৌধুরী মইন উদ্দিন ও আশরাফুজ্জামান খান। দুজনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব‌্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধে মামলা হয় এবং মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। দুজনই স্বাধীনতার পর দেশের বাইরে পালিয়ে যান। এদের মধ্যে মইন উদ্দিন যুক্তরাজ্যে ও আশরাফুজ্জামান যুক্তরাষ্ট্রে আছেন।

চৌধুরী মইন উদ্দিন

মৃত্যুদণ্ডের রায় হওয়ার পর ২০১৩ সালের ৩ ডিসেম্বর মইন উদ্দিনকে ফেরত পাঠানোর জন্য আনুষ্ঠানিক প্রত্যর্পণ অনুরোধ পাঠায় যুক্তরাজ্য। এর জবাবে যুক্তরাজ্য কর্তৃপক্ষ মইন উদ্দিনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হবে না এই মর্মে লিখিত চিঠি চায়। এছাড়া এই বিষয়ে কর্তৃপক্ষ আরও কিছু তথ্য চাইলে ২০১৪, ২০১৬ ও ২০১৮ সালে তাদের চিঠি দিয়ে তথ্য সরবরাহ করা হয়। এ বিষয়ে এখনও যুক্তরাজ্য কর্তৃপক্ষ কোনও জবাব দেয়নি।

২০১৯ সালের ২৪ ডিসেম্বর পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন পুনরায় মইন উদ্দিনকে ফেরত পাঠানোর জন্য চিঠি পাঠায়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘মইন উদ্দিন যুক্তরাজ্যের নাগরিক এবং ওইদেশে মৃত্যুদণ্ডের বিধান নেই। ফলে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি তারা ফেরত পাঠায় না।’

এ বিষয়ে বাংলাদেশ-যুক্তরাজ্য স্ট্র্যাটেজিক সংলাপে একাধিকবার আলোচনা হয়েছে এবং আগামী বছরে অনুষ্ঠিতব্য তৃতীয় সংলাপে আবার আলোচনা হবে বলে তিনি জানান।

আশরাফুজ্জামান খান

আদালত মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার পরে যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের কাছে আশরাফুজ্জামানকে ফেরত চেয়ে ২০১৩ সালে চিঠি দেয় সরকার। কিন্তু এখনও চিঠির উত্তর দেয়নি যুক্তরাষ্ট্র।

কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ২০১৮ সালে তাদের নিজস্ব তদন্তের জন্য খুনির কিছু তথ্য চায় যা সরবরাহ করা হয়েছে। এরপর পররাষ্ট্রমন্ত্রী গত বছর যুক্তরাষ্ট্রকে আবার চিঠি দেন খুনিকে ফেরত দেওয়ার জন্য।

এ বিষয়ে একজন কর্মকর্তা বলেন, আশরাফুজ্জামানকে ফেরত আনার প্রক্রিয়া অব্যাহত আছে। আমরা উপযুক্ত ফোরামে এ বিষয়ে আলোচনা করছি।

এ বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘যে দুজন ঘাতক বিদেশে জীবিত আছে তাদের একজন যুক্তরাষ্ট্রে এবং আরেকজন যুক্তরাজ্যে। এখনও তারা লুকিয়ে আছে। আমাদের স্ট্যান্ডিং নীতি হচ্ছে যত ঘাতক, যত অপরাধী বিদেশে আছে, তাদের ফিরিয়ে এনে বিচারের সম্মুখীন করা। এদের ক্ষেত্রে একই প্রচেষ্টা আমরা চালিয়ে যাচ্ছি। আমরা যেভাবে পারছি সেভাবে চালিয়ে যাচ্ছি, কিন্তু ওইসব দেশ বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে ওদেরকে আমাদের দেশে পাঠায়নি। আমরা আশাবাদী এদেরকে আমরা একদিন বিচারের সম্মুখীন করতে পারবো।’

error: