উৎপাদন মূল্যের চেয়ে চায়ের নিলাম মূল্য কম হওয়ায় দেশের চা শিল্প বর্তমানে কঠিন সময় পার করছে বলে মন্তব্য করেছেন চা বাগান মালিক ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এ অবস্থায় অনেক চা বাগান বন্ধ হয়ে যাবার আশংকা প্রকাশ করেন তারা।
তারা ১৫০ বছরের পুরনো এই ঐতিহ্যবাহী এ চা শিল্পকে বাঁচাতে কেজি প্রতি চায়ের নিম্নতম নিলামমূল্য ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা নির্ধারণ করার দাবি জানান।
গতকাল রোববার দুপুরে সিলেটে এক সংবাদ সম্মেলনে সিলেটের ২৫টি বাগান মালিকদের পক্ষ থেকে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়। ম্যাক্সন বাদার্স টি এস্টেটের ডিরেক্টর (অপারেশন) মুফতি মোহাম্মদ হাসান সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, অন্যান্য শিল্পের উৎপাদিত পণ্যের তুলনায় চা নিলাম মূল্য উৎপাদন মূল্যের অনেক কম। বাগানে ব্যবহৃত রোগবালাই দমনে ঔষধসহ অন্যান্য পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন খরচ কয়েকগুণ বেড়েছে। কিন্তু, তার চেয়েও বেশি মাত্রায় কমেছে চায়ের নিলাম মূল্য। এই নিলাম মূল্য দিয়ে লাভ তো নয়-ই, উৎপাদন খরচ বহন করাও কোনভাবে সম্ভব নয়।
এ অবস্থা থেকে চা শিল্পকে বাঁচাতে চায়ের চোরাচালান বন্ধের পাশাপাশি পঞ্চগড় এলাকায় চা উৎপাদনের মান এবং বিধিসম্মতভাবে চা বাজারজাতের ব্যবস্থা, চা বাগানকে বহুমুখী আয়ের উৎস সৃষ্টি কল্পে চা পযর্টন স্থাপন, কৃষি ঋণ পরিশোধের হার কমানো ও শর্তাবলী সহজ করা সহ আরও কয়েকটি দাবি জানান।
তিনি বলেন, চা শিল্পের উপর কয়েক লক্ষ শ্রমিক, কর্মচারীর জীবন জীবিকা নির্ভরশীল। পরোক্ষভাবে আরো কয়েক লক্ষ লোক চা শিল্পের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। অথচ বর্তমানে চা শিল্প কঠিনতম পরিস্থিতিতে নিমজ্জিত-যা এই শিল্পের টিকে থাকার ভিত নাড়িয়ে দিচ্ছে।
অবস্থার উত্তরণে চা বাগান মালিকরা প্যাকেজিং এর নিম্নতম পরিমাণ ২৫% থেকে ৫০% করা, ভাল প্যাকেটজাত চা বা টি ব্যাগ রপ্তানি করার সুযোগ সৃষ্টি করা, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করার শিডিউল রি-স্ট্রাকচার করার সুযোগ, রুগ্ন, ছোট বা যেসব ছোট বাগানের উৎপাদন কম সেসব বাগানকে ৫ বছরের জন্য ট্যাক্স হলিডে দিয়ে তাদের উৎপাদন বাড়ানোর সুযোগ, বাগানগুলোতে আইন শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য আইন রক্ষাকারী বাহিনীর ত্বরিৎ ব্যবস্থা গ্রহণের পদক্ষেপ, বিশেষ করে বাগানের জায়গা দখলকারীদের বিরুদ্ধে তড়িৎ ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্য বাগান মালিকরা সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। এসময় চা-বাগান মালিকদের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন ম্যাকসন গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ খছরুজ্জামান, রেহানা চা-বাগানের পরিচালক শফিকুল বারী, খাদিম চা-বাগানের জেনারেল ম্যানেজার নোমান হায়দার চৌধুরী, মালনি ছড়া চা-বাগানের ম্যানেজার আজম আলী, মাথিউরা ও মুমিন ছড়া চা-বাগানের ম্যানেজার রুকন উদ্দিন খান, এম আহমদ টি অ্যান্ড ল্যান্ড কোম্পানির জেনারেল ম্যানেজার সৈয়দ মহিউদ্দিন, এম আহমদ গ্রুপের পরিচালক সাজিদ আব্দুল্লাহ চৌধুরী প্রমুখ।