ওসমানীনগর ট্র্যাজেডি,ডেথ সার্টিফিকেটের অপেক্ষায় সাদিকুল

টেমসসুরমানিউজডেক্স: যুক্তরাজ্য প্রবাসী পিতা, বোন ও ভাইয়ের ডেথ সার্টিফিকেটের অপেক্ষায় রয়েছেন সাদিকুল ইসলাম। জানালেন- ‘ডেথ সার্টিফিকেট পেলে তিনি মাকে নিয়ে যুক্তরাজ্যে চলে যাবেন।’ স্বামী ও দুই সন্তান হারিয়ে হুসনে আরা শোকে কাতর। বার বার মূর্ছা যাচ্ছেন। মানসিকভাবে কিছুটা ভারসাম্যহীন। সব সময় কাঁদেন। এ কারণে মাকে নিয়ে দ্রুতই যুক্তরাজ্যে ফিরতে চান সাদিকুল। সিলেটের ওসমানীনগর ট্র্যাজেডি। ২৫শে জুলাইয়ের ঘটনা। হঠাৎ করেই ঘুমের মধ্যে অচেতন হয়ে পড়েন যুক্তরাজ্য ফেরত একই পরিবারের ৫ সদস্য। তারা একই কক্ষে ঘুমিয়ে ছিলেন।

সকালে তাদের তাজপুরের বাসা থেকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। হাসপাতালে নেয়ার পর যুক্তরাজ্যের কার্ডিফে বসবাসকারী ওসমানীনগরের ধিরারাই গ্রামের রফিকুল ইসলাম ও তার ছেলে মাহিকুল ইসলামকে মৃত ঘোষণা করেন ডাক্তার। বড় ছেলে সাদিকুল ইসলাম কিছুটা সুস্থ ছিলেন। তবে আইসিইউতে টানা ১০ দিন লড়াই করে বেঁচে গেছেন মা হুসনে আরা। ৯ দিন আইসিইউতে থাকার পর একমাত্র মেয়ে সামিরা ইসলাম ৫ই আগস্ট মারা যান। এখন মাকে নিয়ে ধিরারাই গ্রামে নানার বাড়িতে বসবাস করছেন। ঘটনার পর একদিন গিয়েছিলেন ওই বাসায়। এরপর চলে আসেন নানার বাড়ি। শোকে কাতর পুরো পরিবার। ১২ই জুলাই স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে দেশে এসেছিলেন প্রবাসী রফিকুল ইসলাম।
উদ্দেশ্য ছিল- ছোট ছেলেকে ডাক্তার দেখানো। ঢাকায় এক সপ্তাহ থেকে ডাক্তার দেখিয়ে ফিরেন ওসমানীনগরে। আর সেখানেই ‘অজ্ঞাত’ কারণেই তাদের মৃত্যু হয়। পরিবারের ৫ সদস্যের মধ্যে কেবল বেঁচে আছেন সাদিকুল ও তার মা হুসনে আরা। দু’জনেরই মানসিক অবস্থা শোচনীয়। তছনছ হয়ে গেছে গোটা পরিবার। সাদিকুল ইসলাম অত্যন্ত কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলা করেও নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন মাকে স্বাভাবিক জীবনে ফেরাতে। এদিকে- ঘটনার পর সাদিকুল বাংলাদেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা ও পুলিশি তৎপরতায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তবে তিনি দ্রুত তার মৃত বাবা, ভাই ও বোনের ডেথ সার্টিফিকেট চেয়েছেন। এ কাজে সাদিকুল বৃটিশ ও বাংলাদেশ সরকারের সহযোগিতা চেয়েছেন। সাদিকুল জানিয়েছেন, তার মা অসুস্থ। এখানে থেকে শুধু কান্না করছেন। যুক্তরাজ্য গেলে একটু স্বাভাবিক হতে পারেন। ওখানে ডাক্তার দেখাবেন।

এখন পিতা, ভাই ও বোনের ডেথ সার্টিফিকেটের অপেক্ষায় রয়েছেন। যুক্তরাজ্যে গিয়ে মাকে ভালো চিকিৎসা ও পরিচর্যার মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করবেন। স্বজনরা জানিয়েছেন, ‘হুসনে আরা বেগম ছিলেন প্রাণবন্ত একজন মানুষ। তিনি সংসার আগলিয়ে রাখতেন। ঘটনার পর থেকে এখনো স্বাভাবিক হতে পারেননি। ডাক্তারের পরামর্শে এখনো তার চিকিৎসা চলছে। মাঝেমধ্যে অস্বাভাবিক আচরণ করেন।’ এদিকে- ওসমানীনগরের প্রবাসী পরিবারের এই ঘটনায় কোনো বিষক্রিয়া কিংবা বাইরে থেকে কারও সম্পৃক্ততার তথ্য পায়নি পুলিশ কিংবা মেডিকেল বোর্ড। ঘটনার পর পুলিশ ঘটনার চুলচেরা বিশ্লেষণ করেছে। নানাভাবে তারা ঘটনার তদন্ত করছে। কমপক্ষে ১০ জন নিকট আত্মীয়কেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। কারও কাছ থেকে সন্দেহজনক কিছু পাওয়া যায়নি। জমি কিংবা অন্য কারণে কারও সঙ্গে কোনো বিরোধ ছিল না। সিলেট পুলিশ সুপার বার বার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। গোটা ঘটনাকে তিনি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করেন। মাঝখানে একদিন তিনি ওই বাসায় গিয়ে বেশ ক’ঘণ্টা অতিবাহিত করেন। এরপর জেনারেটর পরীক্ষা করেন। জেনারেটর চালিয়ে ওই ঘরে অবস্থানের সময় কিছু একটা আন্দাজ করেন। পরে তিনি সাংবাদিকদের কাছে তার ধারণার কথা জানান। বলেন- ঘটনার দিন জেনারেটর যে স্থানে ছিল সেই স্থানে জেনারেটর রেখে চালু করা হয়। এরপর ওই ঘরে তিনি পুলিশ সদস্যদের নিয়ে অবস্থান করেন।

৭ মিনিট অবস্থানের পর আর থাকতে পারেননি। জেনারেটরের ধোঁয়া ঘরে প্রবেশ করে বিষাক্ত হয় পরিবেশ। এ কারণে তিনি ধারণা করেন জেনারেটরের ধোঁয়া দরজার ফাঁক দিয়ে ভেতরে ঢুকে ওই ৫ জন অচেতন হতে পারেন। কারণ; প্রবাসী পরিবারের শোবার ঘরে কোনো ভেন্টিলেটর নেই। ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হওয়ার কারণেই এমন ঘটনা ঘটতে পারে। চার দিন আগে সিলেটে তার বিদায়ী প্রেস ব্রিফিংয়ে একই কথা জানান এসপি ফরিদ উদ্দিন। বৃহস্পতিবার বিকালে এসপি’র ধারণা আরও পরিষ্কার হয়। ওই দিন তার হাতে এসে পৌঁছে মেডিকেল রিপোর্ট। ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দল ময়নাতদন্ত সহ মোট ৫টি প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষার নমুনা সংগ্রহ করেছিলেন।

সেগুলো পাঠানো হয়েছিল ল্যাবে। পরবর্তীতে ল্যাব রিপোর্টেও কোনো আলামত মিলেনি। এসপি ফরিদ উদ্দিন জানিয়েছেন, মেডিকেল রিপোর্টে উল্লেখ আছে তিন প্রবাসীর মৃত্যু ‘রহস্যজনক, অজ্ঞাতকারণে’। অজ্ঞাতকারণের মধ্যে একটি ছিল ঘরে অক্সিজেন কম থাকা। এমনটি ঘটে মাঝেমধ্যে। এ ছাড়া রিপোর্টে মারা যাওয়া ও অসুস্থ হওয়াদের শরীরে কোনো বিষক্রিয়ার অস্তিত্ব মিলেনি। আঘাতেরও কোনো চিহ্ন ছিল না। এদিকে- ওসমানীনগর সার্কেলের এডিশনাল এসপি রফিকুল ইসলাম গতকাল বিকালে মানবজমিনকে জানিয়েছেন, ‘ডেথ সার্টিফিকেট ডাক্তাররা দেন। ক্ষেত্রবিশেষে পুলিশের পক্ষ থেকে দেয়া হয়। প্রবাসী ওই পরিবার চাইলে আমরা ডেথ সার্টিফিকেট দিতে পারি। পুলিশের পক্ষ থেকে তাদের সব ধরনের সহযোগিতা অব্যাহত রয়েছে বলে জানান তিনি।’

error: