ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় গাজীপুরের কাশিমপুর হাই-সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি থাকা অবস্থায় লেখক মুশতাক আহমেদের (৫৩) মৃত্যুর ঘটনা লিখিতভাবে (হলফনামা আকারে) জানাতে বলেছেন হাইকোর্ট। এ মামলার অপর আসামি কার্টুনিস্ট আহমেদ কবীর কিশোরের জামিন আবেদনের শুনানিকালে সোমবার (১ মার্চ) বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। মুশতাক আহমেদের জামিন আবেদনটিও এ দিন শুনানির জন্য কার্যতালিকায় ছিল।
শুনানিতে আবেদনকারীদের আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, মুশতাক আহমেদ মৃত্যুবরণ করেছেন। তখন আদালত বলেন, সেটি আপনি হলফনামা আকারে জানান। তখন তার জামিন আবেদন অ্যাবেট (বাদ) করা হবে।
এরপর কার্টুনিস্ট আহমেদ কবীর কিশোরের জামিন আবেদনের ওপর শুনানি করেন জ্যোতির্ময় বড়ুয়া। তার শুনানির পর আদালত এ বিষয়ে ৩ মার্চ আদেশের জন্য দিন নির্ধারণ করেন।
এর আগে গত ১৩ জানুয়ারি এ মামলায় কার্টুনিস্ট আহমেদ কবীর কিশোর, রাষ্ট্রচিন্তার সদস্য দিদারুল ভূঁইয়া ও লেখক মুশতাক আহমেদকে (কারাগারে সদ্য প্রয়াত) অভিযুক্ত করে অভিযোগপত্র দাখিল করে রমনা থানা পুলিশ। যেখানে জুলকারনাইন খান ওরফে সামিসহ অন্য আট জনকে অব্যাহতির আবেদন করা হয়।
অব্যাহতির সুপারিশপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালক মিনহাজ মান্নান, জার্মান প্রবাসী ব্লগার আসিফ মহিউদ্দিন, নেত্র নিউজের সম্পাদক ও সুইডেন প্রবাসী তাসনিম খলিল, হাঙ্গেরি প্রবাসী জুলকারনাইন শায়ের খান ওরফে সামি, আশিক ইমরান, স্বপন ওয়াহিদ, যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী সাংবাদিক সাহেদ আলম ও ফিলিপ শুমাখার।
এরপর রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনে গত ১০ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক আসসামছ জগলুল হোসেন মামলাটি অধিকতর তদন্তে সিটিটিসিকে নির্দেশ দেন।
২০২০ সালের ৫ মে র্যাব-৩, সিপিসি-১ এর ওয়ারেন্ট অফিসার মো. আবু বকর সিদ্দিক বাদী হয়ে মিনহাজসহ ১১ জনের নামে রমনা থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে এ মামলা করেন। এছাড়াও মামলায় অজ্ঞাত আরও ৫/৬ জনকে আসামি করা হয়।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, আসামিরা ‘আই এম বাংলাদেশি’ নামে ফেসবুক পেজে রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি বা সুনাম ক্ষুণ্ন করতে বা বিভ্রান্তি ছড়ানোর উদ্দেশে অপপ্রচার বা গুজবসহ বিভিন্ন ধরনের পোস্ট দিয়েছে। যা জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি এবং আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটায়। ওই পেজের অ্যাডমিন শায়ের জুলকারনাইন এবং আমি কিশোর, আশিক ইমরান, ফিলিপ সমাচার, স্বপন ওয়াহিদ, মোস্তাক আহম্মেদ নামীয় ফেসবুক আইডিসহ পাঁচ জন এডিটর পরস্পর যোগসাজশে ফেসবুক পেজটি দীর্ঘদিন ধরে পরিচালনা করছেন।
আহমেদ কবীর কিশোর, তাসনিম খলিল, জুলকারনাইন, শাহেদ আলম ও আসিফ মহিউদ্দিনের মধ্যে ‘রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক চ্যাটিং’ এর প্রমাণ পাওয়া গেছে উল্লেখ করে এজাহারে বলা হয়েছে, ‘তাদের ব্যবহৃত স্যামসাং মোবাইল ফোনে ‘আমি কিশোর’ ফেসবুক অ্যাকাউন্ট লগইন অবস্থায় পাওয়া যায়। আলামত পর্যালোচনা করে রাষ্ট্রবিরোধী পোস্ট, মহামারি করোনা ভাইরাস, সরকারদলীয় বিভিন্ন নেতার কার্টুন দিয়ে গুজব ছড়িয়ে জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টির প্রমাণ পাওয়া যায়।
এছাড়াও হোয়াটসঅ্যাপ ও ফেসবুক মেসেঞ্জারে তাসনিম খলিল, শায়ের জুলকারনাইন, শাহেদ আলম, আসিফ মহিউদ্দিনের সঙ্গে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক চ্যাটিংয়ের প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে অভিযোগে বলা হয়।
গত ২৫ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় গাজীপুরে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতরে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন মুশতাক আহমেদ। তাকে প্রথমে কারা হাসপাতালে ও পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসকরা রাত ৮টা ২০ মিনিটে তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তার মৃত্যুর ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। একই ঘটনায় দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে গাজীপুর জেলা প্রশাসন।