টেমসসুরমাডেক্স: বিএনপি ঘোষিত অসহযোগ আন্দোলনের অংশ হিসেবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আগামী বছরের ১ থেকে ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টে আপিল বিভাগ, হাইকোর্ট বিভাগ, সমস্ত জেলা আদালত, সেশন আদালত, মুখ্য মহানগর হাকিমদের আদালত, মুখ্য জুডিশিয়াল আদালতসহ সমস্ত আদালত বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের সংগঠন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম।
গতকাল বুধবার সুপ্রিম কোর্ট বার ভবনে ডামি নির্বাচন বর্জন, কর্তৃত্ববাদী সরকারের পদত্যাগের দাবিতে জনগণের অসহযোগ আন্দোলনের সাথে সংহতি জ্ঞাপন এবং আইনজীবীদের কর্মসূচি ঘোষণা উপলক্ষে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের মহাসচিব ব্যারিস্টার কায়সার কামাল। সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন তিনি।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, আগামী ৭ জানুয়ারি সরকার আরো একটি নীলনকশার পাতানো ডামি নির্বাচনের পাঁয়তারা করছে। কথিত নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক দেখানোর জন্য সরকারি দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী, বিদ্রোহী প্রার্থী, অনুগত প্রার্থী প্রভৃতি হরেক রকমের প্রার্থী দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে। কারা ডামি হিসেবে দাঁড়িয়ে থাকবে তাও ঠিক করে দেয়া হচ্ছে।
‘অবৈধ ফ্যাসিস্ট সরকার রাষ্ট্রের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে হয় আজ্ঞাবহ করেছে, অথবা করায়ত্ত করতে না পেরে প্রতিষ্ঠানগুলোকে দুমড়ে মুচড়ে ভেঙে দিয়েছে। জনগণের শেষ আশ্রয়স্থল হচ্ছে বিচার বিভাগ, সংবিধানের তৃতীয়ভাগে জনগণের মৌলিক অধিকার বিবৃত আছে এবং অনুচ্ছেদ ১০২ অনুযায়ী হাইকোর্ট বিভাগ জনগণের মৌলিক অধিকার বলবৎ করার জন্য সংবিধানের কাছে দায়বদ্ধ। কিন্তু বেদনাহত চিত্ত নিয়ে আমরা প্রত্যক্ষ করলাম, ২৮ অক্টোবরে বিএনপিসহ ভোটের অধিকার ও গণতন্ত্র বিশ্বাসী সকল রাজনীতিক দলের নেতাকর্মী ও বিভিন্ন শ্রেণি পেশার নাগরিকদের ওপর সরকারের পেটোয়া বাহিনী ক্র্যাকডাউন করল, তখন নেতাকর্মীদের আইনের আশ্রয় লাভের অধিকার উপেক্ষিত হলো। যা দেশ ও জাতির জন্য দুর্ভাগ্যজনক।
লিখিত বক্তব্যে আরো বলা হয়, আজ পর্যন্ত সরকার বিরোধীদলের গণতন্ত্রকামী ২৩,৪৬০ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করেছে এবং মামলা দায়ের করা হয়েছে ৬৮৪টি। আর গত ১৬ সপ্তাহে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হয়েছে ১৪৮২ জনকে।
সাংবাদিক সম্মেলনে বলা হয়, দেশ ও জাতির এই চরম যুগ সন্ধিক্ষণে দেশের বৃহত্তম এবং জনপ্রিয় আইনজীবী সংগঠন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম জনগণের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। শেখ হাসিনার পদত্যাগ, ডামি নির্বাচন বর্জন এবং বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং জনগণের মৌলিক অধিকার ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে আমরা নি¤œরূপ কর্মসূচি ঘোষণা করছি।
-১ থেকে ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টে আপিল বিভাগ, হাইকোর্ট বিভাগ, সমস্ত জেলা আদালত, সেশন আদালত, মুখ্য মহানগর হাকিমদের আদালত, মুখ্য জুডিশিয়াল আদালতসহ সমস্ত আদালত বর্জন; ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রধান বিচারপতিসহ সকল বিচারকদের কাছে বর্জনের সিদ্ধান্তের চিঠি হস্তান্তর। সরকার বা সরকারের কোনো অনুচরদের উস্কানিতে পা না দিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে এই গণতান্ত্রিক কর্মসূচি সফল করার জন্য আপনাদের মাধ্যমে বাংলাদেশের বিজ্ঞ আইনজীবী সমাজের নিকট উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও জাতীয় সংসদের সাবেক স্পিকার ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, ফোরামের সভাপতি ও সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলী, সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সভাপতি জয়নুল আবেদীন, ইউনাইটেড লইয়ার ফ্রন্টের কো কনভেনার সুব্রত চৌধুরী, নিতাই রায় চৌধুরী, ফজলুর রহমান, সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সম্পাদক মাহবুব উদ্দিন খোকন, বদরুদ্দোজা বাদল, রুহুল কুদ্দুস কাজল, আইনজীবী ফোরাম সুপ্রিম কোর্ট ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক গাজী কামরুল ইসলাম সজল, আইনজীবী আবেদ রাজা, শাহ আহমেদ বাদল, ইউএলএফে সমন্বয় সৈয়দ মামুন মাহবুব, এএসএম মোক্তার কবির খান, মোহাম্মদ আলী প্রমুখ।