স্বপ্ন পূরনে ইউরোপের পথে লাশ হল তানিল

টেমসসুরমানিউজডেক্স: ইউরোপ যাওয়ার স্বপ্নে ইরানে পাড়ি দিয়েছিলেন তানিল আহমদ (২২)। স্বপ্নকে বাস্তব করতে ইরান থেকে তুরস্ক হয়ে অবৈধপথে গ্রিসে প্রবেশ করতে চেয়ে ছিলেন তিনি। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিণতি। তুরস্কে যাওয়ার পথে ৯ জানুয়ারি (সোমবার) তীব্র শীতে অসুস্থ হয়ে বরফের মধ্যে মর্মান্তিক মৃত্যু হয় তাঁর। তানিলের মৃত্যুর সংবাদে নিজ গ্রাম ও পরিবারে চলছে মাতম।

তানিল আহমদের বাড়ি সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম বীরগাঁও ইউনিয়নের ঠাকুরভোগ গ্রামে। গ্রামের মৃত গিয়াস উদ্দিনের ছেলে তিনি। ৪ ভাই ও তিন বোনের মধ্যে তানিল সবার বড়। পড়ালেখায় ও খেলাধুলা ভালো হলেও বাবার মৃত্যুর পর অভাবের সংসারের হাল ধরতে গত বছরের অক্টোবরে স্থানীয় দালালের মাধ্যমে ইরানে পাড়ি জমান তিনি। তার স্বপ্ন ছিলো- সেখানে থেকে ইউরোপে গিয়ে পরিবারের সবার মুখে সুখের হাসি ফুটানো। তবে ইরান থেকে তুরস্কে যাওয়ার পথে বরফসমাধি তানিলের। তার শরীরে নির্যাতনের চিহ্ন রয়েছে বলে অভিযোগ করছেন পরিবারের সদস্যরা।

তানিলের পরিবারিক সূত্র জানায়, গ্রামের প্রতিবেশী শাহীন নামের এক দালালের মাধ্যমে ৫ লাখ টাকা চুক্তিতে ইরান যান তানিল। ইরানে অবস্থানরত শাহীনের কাছে দুই মাস অবস্থান করার পর আরও ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা চুক্তি করে তুরস্ক প্রবেশ করার কথা ছিল তানিলের। তীব্র শীতের মধ্যে ‘গেইমে’ (এ দফায়) না দেয়ার কথা ছিলো দালাল শাহীনের সাথে। পরিাবরের নিষেধ থাকার পরও ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় চাপ প্রয়োগ করে ৩৪ জন অধিবাসীর সাথে ইরান সীমান্তে বর্ডার ক্রস করতে নিয়ে যাওয়া হয় তানিলকে। তুরস্কে প্রবেশ করতে ব্যর্থ হওয়ায় ইরানে ফেরত আসে সেই দল। এসময় তীব্র ঠান্ডায় বরফে আটকা পড়ে মৃত্যু হয় তানিল আহমদের। ৯ জানুয়ারি স্থানীয় মধ্যরাতে তানিলের মরদেহের ছবি পাঠায় দলে থাকা সঙ্গীরা। তানিলে মরদেহ বর্তমানে ইরানের পুলিশ ক্যাম্পে রয়েছে বলে জানা গেছে।

এদিকে, তানিলের মৃত্যুতে অসহায় হয়ে পড়েছে পিতৃহারা পরিবারটি। কেঁদে কেঁদে বার বার মূর্ছা যাচ্ছেন তানিলের মা। পরিবারের নিষেধ থাকার পরও দালাল চাপ প্রয়োগ করে গেইমে নিয়ে মৃত্যুরমুখে ফেলেছে বলে দাবি তানিলের মা সেলিনা বেগম ও তার ছোট ভাই জামিল আহমদের। তানিলের লাশ দেশে ফিরিয়ে আনতে সরকার ও সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের নিকট আকুতি জানিয়েছেন তারা।

নিহত তানিলের মামা আব্দুস সালাম বলেন, বাবা মারা যাওয়া পর অনেক কষ্ট করে সংসারটি চলছিল। তানিল পড়াশুনায় ভালো ছিল। অভাবের কারণে পড়ালেখা ছেড়ে বুকভরা আশা নিয়ে শাহীনের মাধ্যমে ইরান গিয়েছিল। এভাবে আমার ভাগ্নার মৃত্যু হবে তা কল্পনাও করিনি।

চাচা মানিক মিয়া বলেন, তানিল একজন মেধাবি প্রতিভাবান ছেলে ছিল। ফুটবল খেলায় সে অনেক সুনাম অর্জন করেছিল। ইউনিয়ন ও উপজেলা পর্যায়েও তাঁর মাধ্যমে শিরোপা অর্জিত হয়েছিল। একজন সম্ভবনাময় তুরুণের এমন পরিনতি মেনে নেয়ার মতো না। ভাবতেই পারি না সে মারা গেছে।

নিহত তানিলের ছোটভাই জামিল আহমদ বলেন, প্রতিবেশী শাহীনের মাধ্যমে ৫ লাখ টাকা চুক্তি ইরান যায় আমার ভাই। সেখান থেকে আরও ১ লাখ ৭০ হাজার চুক্তিতে তুরস্ক যাওয়ার কথা। দালাল আমার ভাইকে আরও দুইবার গেইমে তুলছে। এসময় আমার ভাই পুলিশের হাতে অনেক নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন। এখন সেখানে প্রচুর ঠান্ডা । কথা ছিল ঠান্ডার মধ্যে ‘গেইমে’ না দিতে । কিন্তু দালাল কথা রাখেনি। ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও আমার ভাইকে চাপ প্রয়োগ করে ইরানের সীমান্তে নিয়ে হত্যা করে। আমার ভাইয়ের শরীরে নির্যাতনের দাগ রয়েছে। জোর দাবি- আমার ভাইয়ের লাশ দেশে আসুক। সরকার ও সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের নিকট আমাদের আকুতি ভাইয়ের লাশ দেশে আনার ব্যবস্থা করে দিন।

মরদেহ দেশে নিয়ে আসতে যাবতীয় আইনি সহযোগিতা দেয়ার আশ্বাস জানিয়ে শান্তিগঞ্জ উপজেলার ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা সকিনা আক্তার বলেন, পরিবার আবেদন করলে প্রত্যয়নপত্রসহ ইমেইলের মাধ্যমে দুতাবাসে যোগাযোগ করে লাশ দেশে ফিরিয়ে আনতে যাবতীয় সহযোগিতা করা হবে।

error: