দেশে ধর্ষণ, সন্ত্রাস, দুর্নীতি ও টাকা পাচারের বিরুদ্ধে তাদের দেখা না মিললেও শেখ মুজিবুর রহমানের মূর্তি নির্মানের পক্ষে মাঠে নামছে ভারতীয় এজেন্ট হিসাবে পরিচিত ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটিসহ ইন্ডিয়া পন্থি বিভিন্ন সংগঠন। তাদের দাবী হচ্ছে, শেখ মুজিবুর রহমানের মূর্তি নির্মানের বিরুদ্ধে উচ্চকন্ঠে প্রতিবাদকারী হেফাজতে ইসলামের আমীর আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী ও আল্লামা মামুনুল হককে গ্রেফতার করতে হবে। এই দাবিতে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ঘিরে মানববন্ধন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে ভারতীয় মদদপুষ্ঠ সংগঠন ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি।
এই নির্মূল কমিটির উদ্যোগে মঙ্গলবার বেলা ৩টায় এই কর্মসূচি শুরু হবে বলে জানিয়েছেন সংগঠনটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির।
উল্লেখ্য, মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে মুরগিসহ নানা পন্য সরবরাহের অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।
সোমবার তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, মুজিববর্ষে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য এবং সংবিধানের বিরুদ্ধে স্বাধীনতাবিরোধী, মৌলবাদী, সাম্প্রদায়িক অপশক্তির ধৃষ্টতাপূর্ণ হুমকির প্রতিবাদে স্বাধীনতা চত্বর (সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) ঘিরে এক মানববন্ধন কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে। তার ভাষায়, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষের সামাজিক, সাংস্কৃতিক, পেশাজীবী, ধর্মীয়, জাতিগত, শিশু, কিশোর, ছাত্র, যুব, নারী সংগঠন এবং রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের পরিবারের ৬০টি সংগঠন মঙ্গলবারেরর এই মানববন্ধন কর্মসূচিতে অংশ নেবে।
অথচ, দেশে ধর্ষণ ও দুর্নীতি মহামারি রূপ নিয়েছে। এই ধর্ষণের বিরুদ্ধে সাধারণ ছাত্র-ছাত্রী থেকে শুরু করে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন মাঠে নামলেও তাদের দেখা মিলেনি কোথায়ও। ভারতীয় মূর্তি সংস্কৃতির পক্ষে এখন তারা সরব। মূলত ভারতীয় সংস্কৃতির স্বার্থ রক্ষা করাই হচ্ছে এই সংগঠন গুলোর দায়িত্ব।
শাহরিয়ার কবীর জানান, ঢাকায় মৎস্য ভবন থেকে শুরু করে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট, শাহবাগ ও টিএসসি হয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বাইরে এই কর্মসূচি হবে। একই সময়ে সারা দেশে জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়েও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হবে।
শাহরিয়ার কবির বলেন, এই মানববন্ধন ও সমাবেশের মূল দাবি হচ্ছে- অবিলম্বে জাতির পিতা এবং বাংলাদেশের সংবিধান অবমাননাকারী হেফাজতে ইসলামের আমির জুনাইদ বাবুনগরী ও নতুন যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হককে গ্রেপ্তার করতে হবে। পাশাপাশি বাংলাদেশ থেকে জামায়াত-হেফাজতের মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক, সন্ত্রাসী রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে।
তাঁর দেয়া তথ্য অনুযায়ী, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির এ কর্মসূচিতে অংশ নেবে সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম , সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, সম্মিলিত মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা অ্যাসোসিয়েশন, পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদ, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, প্রজন্ম ’৭১, বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটার, বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, ইন্টারন্যাশনাল থিয়েটার ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ রুখে দাঁড়াও, বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ, ইতিহাস সম্মিলনী, জাতীয় কবিতা পরিষদ, সম্প্রীতি বাংলাদেশ, বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন, জাতীয় কবিতা পরিষদ, বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদ, বাংলাদেশ পথনাটক পরিষদ, বাংলাদেশ গণসঙ্গীত সমন্বয় পরিষদ, বাংলাদেশ সঙ্গীত সংগঠন সমন্বয় পরিষদ, বাংলাদেশ নৃত্যশিল্পী সংস্থা, বাংলাদেশ চারুশিল্পী সংসদ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, বঙ্গবন্ধু পরিষদ, বঙ্গবন্ধু গবেষণা সংসদ, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন, বাংলাদেশ যুব মৈত্রী, বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রী, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ (জাসদ), জাতীয় যুব জোট, ইন্টারন্যাশনাল থিয়েটার ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ কেন্দ্র, মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী দক্ষিণ এশীয় গণসম্মিলন, বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন ফর ডেভেলপমেন্ট রিসার্চ, ’৭২-এর সংবিধান পুনঃপ্রবর্তন জাতীয় কমিটি, কেন্দ্রীয় খেলাঘর, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণ কেন্দ্র, মুক্তিযুদ্ধ সংহতি পরিষদ, বাংলাদেশ অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ফোরাম (বোয়াফ), বাংলাদেশ ফার্মাসিস্ট ফোরাম, গৌরব ’৭১, অপরাজেয় বাংলা, মুক্তিযুদ্ধের শহীদ স্মৃতি পাঠাগার, কর্মজীবী নারী, জাতীয় নারী জোট, নারী মুক্তি সংসদ, বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ, শেখ রাসেল ফাউন্ডেশন ইউএসএ (বাংলাদেশ চাপ্টার), জঙ্গিবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা প্রতিরোধ মোর্চা, সেক্যুলার ইউনিটি বাংলাদেশ, ইউথ ফর ডেমোক্রেসি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, আওয়ামী প্রজন্ম লীগ, মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ, ঘাসফুল শিশু কিশোর সংগঠন, বাংলাদেশ মানবাধিকার আন্দোলন, জাতীয় আদিবাসী পরিষদ, জঙ্গিবাদ প্রতিরোধ আন্দোলন বাংলাদেশ।
প্রসঙ্গত, মুজিববর্ষে ধোলাইড়পাড়ে শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য নির্মানের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ভাস্কর্যের নামে মূর্তি তৈরির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন ৯০ শতাংশ মানুষের ধর্মীয় সংস্কৃতির প্রতিনিধিত্বকারী ওলামায়ে কেরাম। হেফাজতে ইসলামসহ ইসলামিক রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন গুলো ইতোমধ্যেই প্রতিবাদ করছে ভাস্কর্যের নামে মূর্তি তৈরির বিরুদ্ধে। আলেম সমাজের এই প্রতিবাদের বিরুদ্ধেই মাঠে নামছে শাহরিয়ার কবির গংরা।
সূত্র: আমার দেশ।