অবশেষে মেয়র আরিফের প্রার্থীতা প্রত্যাহার

কয়েকদিন ধরে সিলেটের রাজনীতিতে আলোচনার কেন্দ্রে তিনি। হঠাৎ করেই জেলা বিএনপি’র সভাপতি প্রার্থী হলেন। মাঠে উত্তাপ-উত্তেজনাও। আরিফকে নিয়ে কম্পন সিলেট বিএনপিতে। কী করতে চান- এমন প্রশ্নের উত্তর খুঁজেন নেতারা। অবশেষে আরিফই দিলেন সমাধান। সরে গেলেন সিলেট বিএনপি’র সভাপতি পদপ্রার্থী থেকে। গতকাল দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী দিলেন সে ঘোষণা।

তাকে নিয়ে রটনা, জল্পনা ও আলোচনার সব জবাব একসঙ্গে দিয়ে দিলেন আরিফ। জানালেন- ‘বিএনপিতেই আছি। বিএনপিই শেষ ঠিকানা। হাইকমান্ডের পরামর্শে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিলাম। জনগণের সেবা করতেই এমন সিদ্ধান্ত।’ সিলেটে আরিফ বঞ্চিতদের নেতা। অপর অংশের নেতা বিএনপি’র চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির। বিএনপি’র মূল অংশটি খন্দকারের সঙ্গে। এবারের সিলেট বিএনপিতেও শক্তিশালী অংশ খন্দকার আব্দুল মুক্তাদিরের। কাউন্সিলেও তারা শক্তিশালী প্রার্থী। মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী প্রার্থী হওয়ায় সব ওলট-পালট হয়ে যায়। হিসাবেও গরমিল। এ কারণে বিএনপি’র সম্মেলন ও কাউন্সিল নিয়ে আরিফকে নিয়ে নানা নাটকীয়তা। মেয়র আরিফকে নিয়ে ভয়ে ছিলেন বিএনপি’র হাইকমান্ডও। তিনি মেয়র। বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নেতা। সিলেট বিএনপিতে আছেন, তবে নীতি নির্ধারণে নয়। উন্নয়ন কাজের জন্য মেয়রকে সরকারের কাছাকাছি থাকতে হয়। বিএনপি’র রাজনীতিতেও তিনি ‘তুরুপের তাস’। তাকে নিয়ে বাজি ধরে সিলেট নগর মসনদে সিলেটে দু’দুবার জয় পেয়েছে বিএনপি। এই অবস্থায় মেয়র আরিফ বিএনপি’র দায়িত্বে এলে আগামীতে অনেক কিছুই ঘটতে পারে। তিনি নিজেও ঝুঁকিতে পড়তে পারেন। দলও হতে পারে ক্ষতিগ্রস্ত। আর সভাপতি পদে পরাজিত হলে ইমেজ সংকটে পড়তে পারেন আরিফ। আগামী বছর সিটি নির্বাচন। বিএনপি’র অভ্যন্তরীণ এই প্রতিযোগিতার ফলাফলে তছনছ হতে পারে ভোটের মাঠ। সার্বিক বিষয় চিন্তা করেই হাইকমান্ডের পরামর্শে আরিফ সিদ্ধান্ত দিলেন নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার। এরইমধ্যে হাইকমান্ডের সুনজরে রয়েছেন তিনি। হাইকমান্ডের সঙ্গে কয়েক দফা যোগাযোগ হয়েছে। পরামর্শ গ্রহণ করেছেন মেয়র আরিফ। জানিয়েছেন- ‘দলের প্রয়োজনে সব করবেন।’ ফলে হাইকমান্ডও তাকে নিয়ে আশাবাদী। সামনে দলই দিতে পারে ভালো সুযোগ- সেই অপেক্ষা শুরু হলো আরিফের। সিলেট বিএনপি’র সভাপতি প্রার্থী থেকে সরে যাওয়ার পর সম্মেলন ও কাউন্সিল স্থগিত হওয়ার কারণও পরিষ্কার হয়েছে। সিলেটের নেতারা বলছেন; ভোটার তালিকা নিয়ে বিতর্কের কারণে সম্মেলন স্থগিত করা হয়েছে। দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমদ আনুষ্ঠানিক ভাবে সে তথ্য জানালেন। সিলেট সফর করে গেছেন দলের সহ-সভাপতি ডা. জাহিদ। বৈঠকের পর বৈঠক করেছেন। মেয়র আরিফের সঙ্গেও একান্তে বৈঠক করেন। হাইকমান্ডের সঙ্গেও আলোচনা করেন। এরপর দেয়া হলো আরিফকে সরে যাওয়ার পরামর্শ। আরিফও সেটি মানলেন। গত সোমবার রাতে সিদ্ধান্ত নিয়ে গতকাল দুপুরে তিনি সিলেটের কুমারপাড়াস্থ একটি কমিউনিটি সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করলেন। আর এই সংবাদ সম্মেলনে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন তিনি সরে যাওয়ার। সংবাদ সম্মেলনে আরিফ জানালেন- ‘বিএনপি’র হাইকমান্ডের পরামর্শে সিলেট জেলা বিএনপি’র কাউন্সিলে সভাপতির পদ হতে আমার প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিতে আমি অকুণ্ঠভাবে ঘোষণা করছি। এবং এই ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে আমার সঙ্গে পথচলা সকল নেতাকর্মী তথা বিএনপি’র প্রাণ- সিলেট জেলার প্রত্যেক তৃণমূল নেতাকর্মীদের বুকে ঠাঁই পাওয়া আরিফ নিঃসংকোচে স্বীকার করছি, জানান দিচ্ছি- আমি আপনাদের ভালোবাসয় সিক্ত, আপ্লুত।
এদিকে- আরিফুল হক চৌধুরীর প্রার্থিতা প্রত্যাহারের আগে সিলেট বিএনপি’র নির্বাচন পরিচালনা কমিটির তরফ থেকে এক বিজ্ঞপ্তিতে পুনরায় প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সুযোগ রাখার বিষয়টি জানানো হয়।

error: