করোনা সচেতনতায় ইস্টহ্যান্ডস এর ওয়েবিনার

যুক্তরাজ্যে করোনা ভাইরাসের বিস্তার, বর্তমান অবস্থা নিয়ে ‘কোভিড-১৯ : বাস্তবতা ও প্রভাব’ শীর্ষক ওয়েবিনার করেছে যুক্তরাজ্য ভিত্তিক দাতব্য সংস্থা ইস্টহ্যান্ডস। সংস্থার চেয়ারম্যান নবাব উদ্দিনের স্বাগত বক্তব্যে ওয়েবিনারে প্রধান আলোচক ছিলেন দি সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল চাইল্ডের মা ও শিশু স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, টেলিভিশন সংবাদ পাঠিকা, খ্যাতিমান পাবলিক স্পিকার ডা. জাকি রেজওয়ানা আনোয়ার।

ওয়েবিনারে উপস্থিত ছিলেন, ক্রয়ডন কাউন্সিলের মেয়র কাউন্সিলার শেরওয়ান চৌধুরী, বিবিসির সাবেক সাংবাদিক উদয় শংকর দাশ, লণ্ডন বাংলা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ বেলাল, সিনিয়র সাংবাদিক আবু মুসা হাসান, বিশিষ্ট রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ী , কমিউনিটি নেতা শাহনূর খান, সাপ্তাহিক জনমত পত্রিকার সহ সম্পাদক মুসলেহ উদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ সেন্টারের সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসাইনসহ আরো অনেকে।

জাতীয় লটারী কমিউনিটি ফান্ডের সহায়তায় বাংলাদেশী কমিউনিটির মানুষদের টিকা গ্রহনে উৎসাহ দেয়ার জন্য, কোভিড-১৯ বর্তমান অবস্থা, যুক্তরাজ্যে ভারতীয় ধরনের বিস্তার বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য ইস্টহ্যান্ডসের ৬ মাস ব্যাপী প্রজেক্টের অংশ হিসাবে এই ওয়েবিনার আয়োজন করা হয় ।

ওয়েবিনারে টাওয়ার হ্যামলেটস , নিউহ্যামেসহ যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন শহর থেকে বাংলাদেশীরা অংশ নেন।

ডা. জাকি রেজওয়ানা আনোয়ার কোভিড ছড়ানো সম্পর্কে বলেন, ‘কোভিড সব চাইতে বেশী ছড়ায় বদ্ধ ঘরে বা বদ্ধ হলরুমে বিশেষ করে যখন অনেক লোকের সমাগম হয়। সেটা হতে পারে দু’ভাবে, প্রথমত, কথা বলার সময় বিশেষ করে চিৎকার করে কথা বলার সময়, হাঁচি কাশি এমন কি হাসার সময় বিশেষ করে জোরে জো‌রে হাসার সময়, যদি কারো কাছাকাছি থাকেন, যেটিকে আমরা বলি ড্রপলেট ইনফেকশন। দ্বিতীয়ত, আপনি হয়তো ঐ ব্যক্তিটির খুব কাছাকাছি নেই কিন্তু বদ্ধ পরিবেশের কারণে তা বাতাসে ভেসে ভেসে আপনার কাছে এলো। আপনার কাছে যখন জীবাণুটি এলো ঠিক ঐ মুহুর্তে ঐ ব্যক্তিটি হয়তো আর ঐ ঘরে নেই, এটিকে আমরা এরোসোল বলে থাকি। মনে করুন কেউ সিগারেট খেয়ে ঘর থেকে বের হয়ে গেল, আপনি ধূমপায়ীকে দেখতে পাচ্ছেন না কিন্তু ঘরে ঢুকেই সিগারেটের গন্ধ পাচ্ছেন, বিষয়টা কিছুটা এ রকম।’

কোভিড থেকে বাঁচতে হলে দুটি সতর্কতামূলক ব্যবস্থা অভ্যাসে পরিণত করতে হবে বলে জানান ডা. জাকি রেজওয়ানা আনোয়ার। তিনি বলেন, ‘ঘন ঘন হাত ধোয়া, বাইরে থেকে যে কোনো জিনিস বাড়ীতে এলে সেটা পরিস্কার করে ব্যবহার করা, যে জায়গা বা জিনিস অনেকে স্পর্শ করতে পারে সেগুলো পরিস্কার রাখা অত্যন্ত ভাল অভ্যাস কিন্তু তাতে কোভিডের চাইতে ফ্লু প্রতিরোধ করা যায় বেশী। সত্যি বলতে কি আমরা গত এক বছরে এমনভাবে হাত ধুয়েছি যে আমরা ফ্লু অনেকটাই বিতাড়িত করতে পেরেছি। এ কারণেই হয়তো আপনারা লক্ষ্য করেছেন কোভিড-১৯ এর মধ্যে গতানুগতিক সিজোনাল ফ্লুতে যে মৃত্যুগুলো হয় প্রতি বছর, তা হয়নি। কোভিড প্রতিহত করা যায় মাস্ক পড়ে আর ফ্লু প্রতিহত করা যায় হাত ধুয়ে।

মহামারী থেকে বাঁচতে হলে টিকার বিকল্প নেই জানিয়ে তিনি বলেন, প্যান্ডেমিকের হাত থেকে কিভাবে মুক্তি পাব, তার উত্তর হচ্ছে ভ্যাকসিন। এই ভ্যাকসিনকে ঘিরে রয়েছে ইনফোডেমিক। যে ভ্যাকসিনগুলো বৃটেনে (এবং বিশ্বের বেশীরভাগ দেশে) দেওয়া হচ্ছে যেমন অক্সফোর্ড-এস্ট্রাজেনেকা, ফাইজার-বায়োএন্টেক, মডারনা এবং জনসন এন্ড জনসন, এর কোনোটিতেই শুকরের দেহ থেকে নেওয়া চর্বি জাতীয় কোনো উপাদান নেই। এছাড়া টিকা নিলে কিছু ক্ষেত্রে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হলেও টিকার উপকারিতা বেশী। তাই টিকা ছাড়া বিকল্প নেই।

দীর্ঘ ১ ঘন্টার সেশনের মধ্যে প্রশ্ন-উত্তর পর্বেও অংশগ্রহনকারীরা কোভিড সংক্রান্ত নানা ধরনের প্রশ্ন করেন।

ইস্টহ্যান্ডস মূলত টাওয়ার হ্যামলেটস ও নিউহ্যামসহ যুক্তরাজ্যের বাংলাদেশী কমিউনিটির কোভিড সচেতনতায় ৬ মাস ব্যাপী একটি প্রজেক্ট নিয়ে কাজ করছে। এ সংক্রান্ত সকল তথ্য ইস্টহ্যান্ডসের ওয়েব সাইটে দেয়া আছে।

error: