জামুকার এখতিয়ার নিয়ে প্রশ্ন বিএনপির দুই খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধার

জিয়াউর রহমানের মুক্তিযুদ্ধের রাষ্ট্রীয় খেতাব বাতিলে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল-জামুকার এখতিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপির দুই খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা হাফিজউদ্দিন আহমেদ ও শাহজাহান ওমর।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজ বীর বিক্রম বলেছেন, ‘হু ইজ জামুকা? জামুকার এগুলো কাজ না। জামুকা হল কে ভাতা পাবে কি পাবে না, কে মুক্তিযোদ্ধা, কে মুক্তিযোদ্ধা হবে না।’

আরেক ভাইস চেয়ারম্যান শাহজাহান ওমর বীর উত্তম বলেছেন, ‘জামুকার কোনো এখতিয়ার নেই আমাদের মিলিটারি অফিসার যারা মুক্তিযোদ্ধা, তাদের বিষয় কিছু বলার, সিদ্ধান্ত নেয়ার।’

‘জামুকা তাদের নিজস্ব বৈঠকে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এটা তাদের এখতিয়ার বহির্ভূত এবং আমাদের ‍মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী যে কথা বলেছে, এটাও তার এখতিয়ার বহির্ভূত।’

তারা দুজন বৃহস্পতিবার বিএনপির স্থায়ী কমিটি আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত হয়ে দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়ার বীর উত্তম খেতাব বাতিলের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানান।

সংবিধান লঙ্ঘন, বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিদের দেশত্যাগে সহায়তা এবং তাদের গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়নের কারণে সেনাশাসক জিয়ার রাষ্ট্রীয় খেতাব বাতিলের সিদ্ধান্ত মঙ্গলবার নেয় জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা)।

বিএনপি নেতারা তা নিয়ে প্রশ্ন তুললে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘খেতাব বাতিলের ক্ষেত্রে কোনো আইনি জটিলতা নেই।’

মুক্তিযুদ্ধে ‘জেড’ ফোর্সের কোম্পানির কমান্ডার অবসরপ্রাপ্ত মেজর হাফিজ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে তৎকালীন উপ সেনা প্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান কখনও সম্পৃক্ত ছিলেন না।’

‘বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের তো বিচার হয়েছে। কই কোনো সাক্ষী, কোনো ব্যক্তি কেউ কি বলেছে যে, উনি এই ধরনের হত্যাকাণ্ডে অংশগ্রহণ করেছেন।’

নানা ঘটনায় সমালোচনার মুখে সরকার ‘জনগণের দৃষ্টি ফেরাতে’ এ পদক্ষেপ নিয়েছে বলে মনে করেন বিএনপির এই নেতা।

মুক্তিযদ্ধের সাব-সেক্টার কমান্ডার অবসরপ্রাপ্ত মেজর শাহজাহান ওমর বলেন, ‘কী কারণে হঠাৎ করে জামুকা এ প্রস্তাব করল, আমার বোধগম্য নয়।আমরা যারা মিলিটারি ফোর্স, আমাদের কনট্রোল করে কোর নামে একটা সংস্থা আছে- সেন্টার অফিসার্স রেকর্ড অফিস। আমাদের সঙ্গে জামুকার কোনো সম্পর্ক নাই।’

তিনি বলেন, ‘বীর শ্রেষ্ঠ, বীর উত্তম, বীর বিক্রম, বীর প্রতীক- এটা তো আমরা যুদ্ধ করে অর্জন করেছি। এটা কি ছেলের হাতের মোয়া যে যখন চাইবেন কেড়ে নেবেন। আমি তিনবার গুলিবিদ্ধ হয়েছি। আমাকে বীর উত্তম দিয়েছে। কেউ আমাকে এই খেতাব দয়ায় দেয়নি। এই খেতাব কেড়ে নেওয়ার আপনারা কে?’

এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি অনুরোধ জানান হাফিজ। সেই সঙ্গে তিনি বলেন, “খেতাব নিলেও জিয়াউর রহমান জিয়াউর রহমানই থাকবেন।”

সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘জিয়াউর রহমানের সাফল্য কারো জন্য মর্মপীড়ার কারণ হতে পারে, কিন্তু ইতিহাস বিকৃত করার কিংবা মহান মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের অসম্মান করার অধিকার কারো নেই।’

জামুকার সিদ্ধান্তের নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তাদের এই সিদ্ধান্ত শুধু রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলকই নয়, তাকে (জিয়া) খেতাব প্রদানকারী তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর বিচার-বুদ্ধির প্রতিও অশ্রদ্ধা প্রকাশ।’

গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌ্ধুরী, সেলিমা রহমান, সাবেক সাংসদ জহির উদ্দিন স্বপন, চেয়ারপারসনের একান্ত সচিব আবদুস সাত্তার ও বিএনপি চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইং কর্মকর্তা শায়রুল কবির খান উপস্থিত ছিলেন।

error: