বাংলাদেশ থেকে ভারতে অনুপ্রবেশের প্রবণতা কমছে, স্বীকার করলো দিল্লি

সম্প্রতি নানা পরিসংখ্যানে বা অর্থনীতির নানা সূচকে যে জিনিসটা ক্রমশ দিনের আলোর মতো পরিষ্কার হয়ে উঠছে, ভারতে কেন্দ্রীয় সরকারের তথ্যও সেই বাস্তবতাটা অবশেষে স্বীকার করে নিলো। আর সেটা হলো, বাংলাদেশ থেকে ভারতে কথিত ‘অনুপ্রবেশে’র হার গত পাঁচ বছর ধরেই কমছে—এবং কার্যত বিপুল হারে কমছে! 

ভারতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বুধবার (১০ ফেব্রুয়ারি) পার্লামেন্টে এক প্রশ্নের উত্তরে প্রতিমন্ত্রী নিত্যানন্দ রাই যে লিখিত জবাব দিয়েছেন, তাতে পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে ২০১৬ সাল থেকে শুরু করে পরবর্তী পাঁচ বছরে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে অনুপ্রবেশকারী হিসেবে আটক ব্যক্তির সংখ্যা কিংবা এই সংক্রান্ত মামলার সংখ্যাও অনেক কমেছে।

যেমন, ভারত সরকার জানিয়েছে ২০১৬ সালে সীমান্তে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশের জন্য আটক করা হয়েছিল মোট ১৬০১জনকে। সেই জায়গায় ২০২০ সালে সেই সংখ্যা নেমে দাঁড়িয়েছে হাজারেরও কমে—মাত্র ৯৫৫ জনে। মাঝে ২০১৮ সালে তো অনুপ্রবেশকারী সন্দেহে আটক হয়েছিলেন মাত্র ৮৮৪জন। 

একইভাবে, ২০১৬ তে যেখানে অনুপ্রবেশের অভিযোগে সাড়ে ছশোরও বেশি মামলা হয়েছিল, ২০১৮তে সেখানে মামলার সংখ্যা ছিল মাত্র ৪২০টি।

পার্লামেন্টে কেন্দ্রীয় সরকারের দেওয়া তথ্য

প্রসঙ্গত, কিছুদিন আগে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বা বিএসএফের প্রকাশিত বার্ষিক রিপোর্টেও দেখা গিয়েছিল, যত মানুষ বাংলাদেশ থেকে ভারতে আসতে গিয়ে ধরা পড়ছেন, তার চেয়ে অনেক বেশি লোক আটক হচ্ছেন ভারত থেকে বাংলাদেশে ঢোকার চেষ্টা করতে গিয়ে। অর্থাৎ ‘নেট’ মাইগ্রেশন এখানে ভারত থেকে বাংলাদেশের দিকে, উল্টোটা নয়।  

কেন্দ্রীয় সরকারের এই তথ্য সামনে আসার পর সীমান্তবর্তী রাজ্য পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় থাকা তৃণমূল কংগ্রেস দাবি করেছে, যদিও অনুপ্রবেশ ঠেকানোর প্রাথমিক দায়িত্ব কেন্দ্রের, তারপরও রাজ্যে মমতা ব্যানার্জির নেতৃত্বাধীন সরকার যে অনুপ্রবেশে কোনও মদত দেয় না এই পরিসংখ্যান তারই প্রমাণ। 

পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় যে এমপি-র প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই তথ্য দিয়েছে, তিনি পশ্চিমবঙ্গেরই তৃণমূল কংগ্রেস সংসদ সদস্য মানস রঞ্জন ভুঁইঞা।

মানস রঞ্জন ভুঁইঞা

বর্ষীয়ান এই রাজনীতিবিদ এদিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলছিলেন, ‘কেন্দ্রীয় সরকার আমার প্রশ্নের যে জবাব দিয়েছে তাতে এটা স্পষ্ট যে অনুপ্রবেশ তেমন কোনও সমস্যাই নয়, অথচ একে রাজনৈতিকভাবে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে দেখানোর চেষ্টা হচ্ছে।’

‘বাংলাদেশ থেকে সেভাবে যে আগের মতো আর কেউ ভারতে ঢোকার চেষ্টা করে না, সেটা তো পরিষ্কার বোঝাই যাচ্ছে’—বলেন তিনি। 

‘কিন্তু তারপরও বিজেপি পশ্চিমবঙ্গের ভোটে এটাকে একটা রাজনৈতিক ইস্যু করতে চায়, সেটা খুব দুর্ভাগ্যজনক’— বলছিলেন মানস রঞ্জন ভুঁইঞা।

বস্তুত, এদিন বৃহস্পতিবারেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও বিজেপির শীর্ষস্থানীয় নেতা অমিত শাহ পশ্চিমবঙ্গের দুটি জনসভা থেকে দাবি করেছেন, ‘পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি ক্ষমতায় এলেই কেবল অনুপ্রবেশ ঠেকানো সম্ভব হবে, মমতা ব্যানার্জির সরকার কোনওদিনই বাংলাদেশ থেকে অনুপ্রবেশ বন্ধ করবে না।’

এদিকে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকেও সম্প্রতি একাধিকবার নানা প্ল্যাটফর্মে বলা হয়েছে, সেখানে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ও কর্মসংস্থানের সুযোগ এখন ভারতের চেয়েও অনেক ভাল—কাজেই বাংলাদেশি নাগরিকদের কাজ বা রুটিরুজির সন্ধানে ভারতে পাড়ি দেওয়ার কোনও কারণই নেই।    

error: