টিকটকে ট্রলের শিকার হচ্ছেন যুক্তরাজ্য-ফ্রান্সের বাংলাদেশি নারীরা

বিবিসির এক তদন্ত প্রতিবেদনে জানা যায়, যুক্তরাজ্যের বাংলাদেশি কমিউনিটির অনেক মহিলার জীবন টিকটক ভিডিও’র ট্রলের কারণে প্রায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।

যুক্তরাজ্য এবং ফ্রান্সের পুলিশ বাহিনীর কাছে রিপোর্ট করার পাশাপাশি সোশ্যাল মিডিয়া সংস্থার কাছে রিপোর্ট দেয়া হয়েছে এই টিকটক ট্রলের ব্যাপারে। যদিও কোনো পক্ষই কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছেন না ট্রল বন্ধের ব্যাপারে। যার কারণে ট্রলের শিকার ব্যক্তিরা আত্মহত্যার হুমকি দিয়েছেন বলে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমের খবরে জানা যায়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইয়র্কশায়ারে বাস করা একজন বাঙ্গালী মহিলা বলেন, টিকটকের মাধ্যমে আমি চরম দুর্ব্যবহারের শিকার হয়েছি প্রতিনিয়ত। আমার মনে হয়েছিল আকাশ আমার উপর ভেঙ্গে পড়ছে। আমি কান্না থামাতে পারি নাই, আমি খেতে পারিনি, আমি ঘুমাতে পারি নি দীর্ঘদিন। আমার মনে হয়েছিল এই জীবন আর রাখব না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাঙ্গালী মহিলা বলেন, ২০২১ সালে টিকটকে এক বন্ধুকে ট্রল থেকে রক্ষা করার পরে তিনিও এই ট্রলের শিকার হন এবং লক্ষ্যবস্তুতে পরিনত হন।

যার বিরুদ্ধে এই অভিযোগ তিনি একজন বাংলাদেশি নাগরিক, তার নাম হাসান সৈয়দ যিনি প্যারিসের শহরতলিতে থাকেন। তার টিকটকে হাজার হাজার অনুসারী রয়েছে।

হাসান সৈয়দ বিভিন্ন মানুষের সামাজিক মিডিয়া ফিড থেকে ব্যক্তিগত ছবি এবং তথ্য চুরি করেন। সেই তথ্য বিভিন্নভাবে খারাপ উদ্দেশ্যে ব্যবহার করেন। হাসান সৈয়দ টিকটক লাইভে যান, কখনও কখনও টার্গেট করা ব্যক্তিদের নিয়ে নানা ধরনের আক্রমণাত্মক কথা বলেন এবং ধর্ষণ ও হত্যার হুমকি দেন।

অনেকেই মনে করেন, যেহেতু টিকটকে হাসান সৈয়দের হাজার হাজার অনুসারী আছেন, তাই তার বিরুদ্ধে কিছু করা সম্ভব হবে না’—এমনটাই বলেন অনেক ভুক্তভোগী।

কামরুল নামের একজন ভুক্তভোগী বলেন, যুক্তরাজ্যে বসবাসরত বাংলাদেশি সম্প্রদায় বেশ রক্ষণশীল। তাই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ট্রলের ভিডিওগুলো ভুক্তভোগীদের পরিবারের জন্য বেশ লজ্জার ও ভয়ের। তাই আমি এর বিরুদ্ধে কিছু করতে চেয়েছি। এসব বন্ধ করতে চেয়েছি।’

হাসানের সঙ্গে অনলাইনে যোগাযোগ করেন কামরুল। মানুষকে ট্রল করে ভিডিও প্রকাশ করা বন্ধ করতে বলেন। ফল হয় উল্টো। তাৎক্ষণিকভাবে কামরুল ও তার পরিবারের সদস্যদের ট্রল করেন হাসান।

কামরুল বলেন, ‘আমাকে নিয়ে ভিডিও বানানো শুরু করেন হাসান। তিনি আমার ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে ঢুঁ দেন। সেখান থেকে আমার এক বছর বয়সী ছেলে, আমার মা ও স্ত্রীর ছবি সংগ্রহ করেন। আমার মা ও স্ত্রীকে ধর্ষণের প্রকাশ্য হুমকি দেন।’

ওই সময় কামরুলের স্ত্রী রুকথান সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। বাধ্য হয়ে কামরুল দ্বিতীয় সন্তানের অপেক্ষায় থাকা স্ত্রীকে সব খুলে বলেন। পুলিশের কাছে অভিযোগ করার সিদ্ধান্ত নেন তারা। সেই সঙ্গে টিকটক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে ভিডিও সরিয়ে নেওয়ার অনুরোধ করেন।

সূত্রঃ বিবিসি

error: