বাংলাদেশ মানবাধিকার পরিস্থিতির কঠোর সমালোচনায় মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রাণালয়

বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির কড়া সমালোচনা করেছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বিগত বছরে ঘটে যাওয়া ঘটনার ওপর ভিত্তি করে মঙ্গলবার গভীর রাতে ‘২০২১ কান্ট্রি রিপোর্টস অন হিউম্যান রাইটস প্র্যাকটিসেস’ শীর্ষক রিপোর্টের বাংলাদেশ চ্যাপ্টার শুরু হয়েছে এভাবে- ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়। এতে টানা তৃতীয় বারের মতো বিজয়ী হয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দল আওয়ামী লীগ। কিন্তু পর্যবেক্ষকরা এই নির্বাচনকে অবাধ ও মুক্ত বলে মনে করেন না। কারণ ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে তাতে। ব্যালট বাক্স ভরাট করা হয়েছে। বিরোধীদলীয় পোলিং এজেন্ট ও ভোটারদের দেখানো হয়েছে ভীতি। বলা হয়েছে, র‌্যাব সহ নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ব্যাপক আকারে নির্যাতন চালিয়েছে।এদিকে এ রিপোর্টকে নাকচ করে দিয়েছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তারা বলেছেন, রিপোর্টে তথ্য বিভ্রাট রয়েছে। ওদিকে রিপোর্টে বলা হয়েছে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরকে কেন্দ্র করে সহিংসতা, সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। মিডিয়ার রিপোর্ট এবং স্থানীয় মিডিয়ার খবরে বলা হয়, আবু ত্বহা মুহাম্মদ আদনান, মাদ্রাসার কিছু শিক্ষার্থী এবং তাদের সহযোগীরা নিখোঁজ হন ওই ঘটনায়। ওই রিপোর্টে বিএনপি প্রধান বেগম খালেদা জিয়ার প্রসঙ্গেও বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, ২০২০ সালের মার্চে খালেদা জিয়ার জেলের মেয়াদ মানবিক কারণে ছয় মাস স্থগিত করে সরকার। তাকে বাসায়ই অবস্থান করতে বলা হয়। এর আগে সেপ্টেম্বরে একবার এবং এবার মিলে দু’বার মারাত্মক অসুস্থতার জন্য খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাওয়ার অনুমতি দিতে অস্বীকৃতি জানায় সরকার। পক্ষান্তরে সরকার বলে তাকে ঢাকায়ই চিকিৎসা নিতে হবে। আগস্টে আইন, বিচার ও পার্লামেন্ট বিষয়ক মন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়াকে বিদেশে যেতে হলে আগে জেলে ফেরত যেতে হবে। তারপর সেখান থেকে আবেদন করতে হবে। ২০১৮ সালে খালেদা জিয়াকে দুর্নীতি এবং অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে ১০ বছরের জেল দেয় আদালত। তবে এই মামলাটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মনে করেন আন্তর্জাতিক এবং দেশের ভেতরের আইন বিশেষজ্ঞরা। তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা প্রমাণে ঘাটতি আছে বলে তারা মনে করেন। তারা আরও বলেন, খালেদার জামিন আবেদনের শুনানি ধীরগতিতে করার নীতি নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। বাংলাদেশে কথা বলার স্বাধীনতা এবং সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতাও বিধিনিষেধের জালে আটকে আছে বলে এতে মন্তব্য করা হয়। বলা হয়, বহুল সমালোচিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করছে কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া মানবাধিকার লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে বেআইনিভাবে অথবা খেয়ালখুশিমতো মানুষ হত্যা করা হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড। জোরপূর্বক গুম। সরকারের পক্ষে তাদের এজেন্ট বা সরকারই নির্যাতন অথবা নিষ্ঠুরতা, অমানবিকতা চালাচ্ছে। অপমানজনক আচরণ করছে। শাস্তি দিচ্ছে। জেলখানায় জীবন হুমকিতে পড়ার মতো অবস্থা। খেয়ালখুশিমতো গ্রেপ্তার ও আটক করা হয়। আছেন রাজনৈতিক বন্দি। অন্য দেশে অবস্থানকারী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে পদক্ষেপ নেয়া হয়। স্বাধীন বিচার বিভাগে গুরুতর সমস্যা আছে। ব্যক্তিগত গোপনীয়তায় খেয়ালখুশিমতো অথবা বেআইনিভাবে হস্তক্ষেপ করা হয়। ব্যক্তিবিশেষের কথিত অপরাধের জন্য শাস্তি দেয়া হয় পরিবারের সদস্যদের। সংবাদ মাধ্যমে স্বাধীন মতপ্রকাশে রয়েছে গুরুতর বিধিনিষেধ। সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে সহিংস অথবা হুমকি দেয়া হয়। তাদেরকে অযৌক্তিকভাবে গ্রেপ্তার করে বিচার করা হয়। ইন্টারনেট স্বাধীনতায় আছে মারাত্মক বিধিনিষেধ। মুক্তভাবে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ ও সম্মেলনের ক্ষেত্রে যথেষ্ট হস্তক্ষেপ করা হয়। রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে মারাত্মক এবং অকারণ বিধিনিষেধ আছে। সরকারি খাতে দুর্নীতি ভয়াবহ। মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠনগুলোকে হয়রানি করা হয়। এলজিবিটি (লেসবিয়ান, গে, বাইসেক্সুয়াল, ট্রান্সজেন্ডার) সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আছে সহিংস অপরাধ ও হুমকি। সমকামিতায় রয়েছে ক্রিমিনালাইজ করার আইন। ট্রেড ইউনিয়নে অবাধে সমাবেশ করার স্বাধীনতায় আছে উল্লেখযোগ্য বিধিনিষেধ। নিরাপত্তা রক্ষাকারীদের এবং দুর্নীতি করে দায়মুক্তি পাওয়ার ব্যাপক রিপোর্ট আছে। দুর্নীতির মামলাগুলো এবং নিরাপত্তা রক্ষাকারীদের হাতে নির্যাতন ও হত্যার তদন্তে এবং বিচারে খুব কমই পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার।
মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সম্পর্কে এতে বলা হয়, বাংলাদেশে অনলাইন এবং অফলাইনে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা উল্লেখযোগ্যভাবে সীমাবদ্ধ। মিডিয়ার সদস্যরা এবং ব্লগাররা নিজেরাই সরকারের হয়রানি এবং প্রতিশোধ নেয়ার ভয়ে সমালোচনাকে সেন্সর করেন। সংবিধানের সমালোচনাকে সংবিধানে রাষ্ট্রদ্রোহের সমান অপরাধ করা হয়েছে। রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে অভিযুক্ত ব্যক্তির তিন বছর থেকে যাবজ্জীবন জেলের শাস্তির বিধান রয়েছে। এই আইন ঘৃণামূলক বক্তব্যকে সীমিত করেছে। কিন্তু সুনির্দিষ্টভাবে বলা হয়নি ঘৃণামূলক বক্তব্য কি। রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, বন্ধুপ্রতিম বিদেশি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে, আইনশৃঙ্খলা, শালীনতা ও নৈতিকতার বিরুদ্ধে বক্তব্যকে হয়তো সীমাবদ্ধ করতে চেয়েছে। অথবা যেসব বক্তব্য আদালত অবমাননা হয়, মানহানি হয়, অপরাধে উস্কানি দেয় তাকে সীমাবদ্ধ করা হয়েছে। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সমালোচনাকে এই আইনে ক্রিমিনালাইজ করা হয়েছে। সাইবার অপরাধ আপাতদৃষ্টে কমিয়ে আনতে পাস করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে (ডিএসএ) বাংলাদেশের স্বাধীনতা, জাতীয় সংগীত অথবা জাতীয় পতাকার বিরুদ্ধে প্রপাগান্ডা ছড়িয়ে দেয়ার শাস্তির বিধান করা হয়েছে যাবজ্জীবন পর্যন্ত। ২০২০ সালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে একটি প্রেস রিলিজ দেয়া হয়। এতে দেশের ভেতরে এবং বিদেশে বসে সরকার, জনপ্রতিনিধি, সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা, পুলিশ আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার বিরুদ্ধে মিথ্যা, বানোয়াট, ভুল এবং প্ররোচনামূলক বিবৃতির ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ দেয়া হয়েছে। এই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, যেসব ব্যক্তি এসব বিষয় মেনে চলবেন না, তাদের বিরুদ্ধে দেশের স্থিতিশীলতা, অভ্যন্তরীণ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষার স্বার্থে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। পুরো বছরজুড়ে করোনা মহামারিতে সরকার কীভাবে মোকাবিলা করেছে তা নিয়ে প্রশ্নকারী সহ সরকারের সমালোচনাকারীদের বিরুদ্ধে ডিএসএ আইন ব্যাপকভাবে ব্যবহার করেছে সরকার। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, ওয়েবসাইট, দেশের বাইরে থেকে যেসব বক্তব্য দেয়া হয়েছে তা সহ অন্যান্য ডিজিটাল প্ল্যাটফরমে পাওয়া বিরোধী বক্তব্যের জন্য ক্রমবর্ধমান হারে এই আইন প্রয়োগ করা হয়েছে। মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় আরও বিধিনিষেধ আরোপ করেছে সরকার। ২০২০ সালে কোভিড-১৯ মহামারি ব্যবস্থাপনায় প্রস্তুতিতে ঘাটতি নিয়ে মিডিয়ায় রিপোর্ট হওয়ার পর সাংবাদিকদের সঙ্গে স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের কথা বলায় নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়। মার্চে ঢাকা ট্রিবিউনে প্রকাশিত একটি রিপোর্ট অনুযায়ী ঢাকায় সাইবার ট্রাইব্যুনালে ২৪৫০টি ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন এবং ইনফরমেশন কমিউনিকেশন্স আইনের মামলা মুলতবি অবস্থা আছে। ওই সময় পর্যন্ত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একজনকে মাত্র দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে।
২৫শে জুলাই ২৪ পৃষ্ঠার একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন এবং অনলাইনে মতপ্রকাশ নিয়ে এই রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়। এতে মুশতাক আহমেদ, আহমেদ কবির কিশোর সহ ১০ জনের বিরুদ্ধে এই আইনে মামলা তুলে ধরা হয়। ওই রিপোর্টে বলা হয়, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ২০০০ মানুষের বিরুদ্ধে কমপক্ষে ১৩০০ মামলা করা হয়েছে। ২০১৮ সালে এই আইন কার্যকর করার পর প্রায় এক হাজার মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২০ সালের জুলাইয়ের মধ্যে কমপক্ষে ১০০ সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়। এর মধ্যে কমপক্ষে ৪০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এই আইনে যেসব মামলা করা হয়েছে তার মধ্যে শতকরা ৮০ ভাগ মামলা করেছেন আইন প্রণেতারা, ক্ষমতাসীন দলের লোকেরা অথবা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কর্মকর্তারা। সব মামলায়ই সরকারের বিরুদ্ধে এবং ক্ষমতাসীন দলের রাজনীতিকদের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনা করে পোস্ট দেয়ার জন্য অভিযুক্ত করা হয়েছে। যারা মত প্রকাশের স্বাধীনতার চর্চা করেন, তাদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দাখিল করা অভিযোগ প্রত্যাহারের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানায় অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। কারা কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, জুলাইজুড়ে এই আইনের অধীনে কমপক্ষে ৪৩৩ জনকে জেলে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে কমপক্ষে ১৮৫ জনের বিরুদ্ধে অনলাইনে আক্রমণাত্মক এবং মিথ্য তথ্য প্রকাশের অভিযোগ আনা হয়েছে। স্থানীয় মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন হিউম্যান রাইটস কালচার ফাউন্ডেশন রিপোর্ট করেছে যে, অক্টোবরে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে কমপক্ষে ২১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ৩১শে ডিসেম্বর স্থানীয় মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন আইন ও সালিস কেন্দ্র রিপোর্ট করেছে যে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ বিভিন্ন আইনে কমপক্ষে ২১০ জন সাংবাদিক হয়রানি, শারীরিক নির্যাতন, অবমাননা, হুমকি এবং মামলার মুখোমুখি হয়েছেন। সংগঠনটি বলেছে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে বছরজুড়ে কমপক্ষে ১১৩৪টি মামলা করা হয়েছে।
এতে আরও বলা হয়েছে, প্রিন্ট এবং অনলাইন নিরপেক্ষ মিডিয়া সক্রিয় ছিল এবং তারা নানা রকম দৃষ্টিভঙ্গির প্রকাশ ঘটিয়েছে। তবে যেসব মিডিয়া আউটলেট সরকারের সমালোচনা করেছে তাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে সরকার। নিরপেক্ষ মিডিয়া পুরো স্বাধীনভাবে অথবা বিধিনিষেধ ছাড়া কাজ করতে পারেনি। দেশের সরকারি টেলিভিশন স্টেশনের ওপর সম্পাদকীয় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে সরকার। বেসরকারি চ্যানেলগুলোকে বিনা চার্জে অনুষ্ঠান সম্প্রচারের সুযোগ দেয়া হয়। নাগরিক সমাজের সংগঠনগুলো বর্ণনা করেছে যে, লাইসেন্স দেয়ার প্রক্রিয়াকে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপে প্রভাবিত করা হয়েছে। সব টেলিভিশন চ্যানেলের লাইসেন্স অনুমোদন দেয় সরকার এবং তাদেরকে দেয়া হয়, যারা ক্ষমতাসীন দলের সমর্থক। জানুয়ারির সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজের এক জরিপ- হু ওনস দ্য মিডিয়া ইন বাংলাদেশ- রিপোর্টে বলা হয়, দেশের মিডিয়া জগতের মালিকানা পাওয়া ব্যক্তিদের রয়েছে পারিবারিক সম্পর্ক, রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা এবং ব্যবসায়িক স্বার্থ। সংবাদপত্র, রেডিও, টেলিভিশন স্টেশন এবং ওয়েব পোর্টালসহ দেশের মোট ৪৮টি মিডিয়া আউটলেটের মালিক মোট ৩২টি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান। রিপোর্ট অনুযায়ী, ক্ষমতাসীন দল তাদেরকেই টেলিভিশন চ্যানেলের লাইসেন্স দিয়েছে, যারা সরাসরি এই দলের সঙ্গে যুক্ত অথবা ২০০৯ সাল থেকে প্রশ্নাতীতভাবে শাসকগোষ্ঠীর প্রতি অনুগত। এই রিপোর্টে সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের ঘটনাও তুলে ধরা হয়। বলা হয়, দেশে এবং বিদেশের অপ্রত্যাশিত তীব্র চাপের মুখে সরকার তাকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। সংবাদপত্রের সম্পাদকদের সংগঠন এডিটরস কাউন্সিল বিবৃতিতে বলে যে, অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার গলা টিপে ধরেছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন। একই সঙ্গে এ সংগঠনের সদস্যরা জোর দিয়ে প্রকাশ্যে সম্পাদকীয় প্রকাশ করতে থাকেন। ক্রিমিনাল রেকর্ড থাকা কারও বিরুদ্ধে গ্রেপ্তার হওয়ার ঝুঁকি দেখা দেয়। তাকে বিচারের আগেই বন্দি রাখা হয়। ব্যয়বহুল বিচার, জরিমানা এবং জেলের শিকার হতে হয়। এডিটরস কাউন্সিলের মতে, এই আইনে অপরাধ এবং শাস্তি বিষয়ে ২০টি ধারার মধ্যে ১৪টি জামিন অযোগ্য, ৫৪টি জামিনযোগ্য, একটি সমঝোতামূলক। ৬ই মার্চ এডিটরস কাউন্সিল বলে যে, এটা বাড়িয়ে বলা হয় না যে- কিছু ক্ষেত্রে আমরা যতটা আশঙ্কা করি তার চেয়েও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের প্রয়োগ বেশি উদ্বেগের। মুক্ত মনের লেখক মুশতাক আহমেদ তার জীবন দিয়ে এটা প্রমাণ করেছেন। ৫ থেকে ৭ই মার্চ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেন রাজনীতিকরা এবং মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠনগুলো। তারা কিশোরের অভিযোগ তদন্তের জন্য সরকারের কাছে অনুরোধ করেন। কিশোর এবং অন্য ৬ জনকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একই মামলায় ১০ বছর পর্যন্ত জেল দেয়া হয়। অভিযুক্ত করা হলে এক লাখ টাকা জরিমানার কথা বলা হয়। জুলাইয়ে স্থানীয় মিডিয়ায় হাসপাতালের বেডে একজন সাংবাদিকের হ্যান্ডকাফ পরা ছবি প্রকাশ করে। তাকে নিরাপত্তা হেফাজত থেকে নিয়ে এভাবে হাসপাতালের বেডের সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়। স্থানীয় হাসপাতালের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে অভিযোগ গঠন করা হয়। ঠাকুরগাঁওয়ের একটি হাসপাতালের রোগীদের জন্য প্রতিদিন ভিত্তিক সরকারি অর্থে খাবার রেশন করা নিয়ে দুর্নীতি ও অনিয়মের রিপোর্ট করার কারণে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে যে তিনজন সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, তার মধ্যে তিনি একজন।
১লা ফেব্রুয়ারি আল জাজিরার ইনভেস্টিগেটিভ ইউনিট ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টারস মেন’ শীর্ষক একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রকাশ করে। যদিও এই রিপোর্ট আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক আলোচিত হয়, স্থানীয় মিডিয়াগুলো এটা উল্লেখ করার সাহস দেখাতেই পারছিল না। প্রথম সারির সংবাদপত্রগুলো কেন এই রিপোর্টে তুলে ধরা অভিযোগ প্রকাশ করতে পারেনি তার ব্যাখ্যা দিয়ে সম্পাদকীয় প্রকাশ করে। দেশের ইংরেজি ভাষার সবচেয়ে সুপরিচিত পত্রিকা দ্য ডেইলি স্টারের একজন সম্পাদক বলেছেন, আমরা যদি মুক্ত মিডিয়া হতাম, তাহলে আমরা আল জাজিরায় প্রকাশিত রিপোর্টের আরও গভীরে যেতাম এবং তা বিশ্লেষণ করতাম পয়েন্ট ধরে ধরে। ঢাকা ট্রিবিউনের সম্পাদকীয়তে তাদের নীরবতা সম্পর্কে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। বিডিনিউজ ২৪ ক্ষমতাসীন দলের সাবেক একজন এমপি’র রাজনৈতিক চাপের মুখে পড়ে। তার ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে পুরনো সব রিপোর্ট সরিয়ে ফেলতে বলা হয়। এতে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রয়োগের আরও অনেক তথ্য তুলে ধরা হয়।
মানবাধিকার বিষয়ক গ্রুপগুলোর মতে, বিরোধী দলগুলোর সমাবেশের বিরুদ্ধে নানা রকম বিধান ব্যবহার করেছে কর্তৃপক্ষ। এক্ষেত্রে সমাবেশের অনুমোদন পাওয়ার ক্ষেত্রে অযৌক্তিক সব রিকোয়ারমেন্ট চাওয়া হয়। বিরোধী দলগুলো, সংগঠন এবং অধিকারকর্মীদের সমাবেশকে ভণ্ডুল করতে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা এবং পুলিশ শক্তি প্রয়োগ করেছে। ২৬ থেকে ২৮শে মার্চ পর্যন্ত ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফর আয়োজনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ বিক্ষোভ ডাকেন হেফাজতে ইসলামের সদস্যরা। পর্যবেক্ষকরা বলেন, আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা, ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা সেখানে উপস্থিত হওয়ার আগ পর্যন্ত বিক্ষোভ ছিল শান্তিপূর্ণ। ৩২৭০ জনের বিরুদ্ধে পুলিশ ১৫৪টি মামলা করে। ফল হিসেবে হেফাজতে ইসলামের সদস্য সহ বিরোধীদলীয় ১২৩০ জন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার ও আটক করা হয়। উপরন্তু বাংলাদেশ ছাত্র, যুব ও শ্রমিক অধিকার পরিষদের ৫৩ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদেরকে আদালতের মাধ্যমে নিরাপত্তা হেফাজতে নেয়া হয়। বিরোধী দল বিএনপিকে নিয়মিতভাবে অনুষ্ঠান আয়োজনের অনুমোদন প্রত্যাখ্যান করছিল কর্তৃপক্ষ এবং ভীতি প্রদর্শন করছিল। এসব ইভেন্টে উপস্থিত হয়েছে ক্ষমতীন দলের নেতাকর্মীরা। ২৯শে মার্চ খুলনায় বিএনপি অফিসের সামনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে হামলা চালায় পুলিশ। এতে ২০ জন আহত হন। ৩১শে মে পুলিশ বিভিন্ন কর্মসূচিতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতা এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে দরিদ্রদের মধ্যে খাদ্য বিতরণ সহ বিভিন্ন কর্মসূচিতে এই বাধা দেয়া হয়।
বাংলাদেশ সরকারের নাকচ: নিরাপত্তা বাহিনীর ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতিতে সরকারের দায়মুক্তি দেয়ার যে অভিযোগ করা হয়েছে মার্কিন মানবাধিকার রিপোর্ট-২০২১ এ তা নাকচ করেছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। ৭৪ পৃষ্ঠার রিপোর্টটি পর্যালোচনা করছেন জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, এখন পর্যন্ত যা দেখেছেন তাতে মনে হয়েছে, রোহিঙ্গা ইস্যুটিও ভুলভাবে মার্কিন রিপোর্টে তুলে ধরা হয়েছে। গতকাল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন। প্রতিমন্ত্রী জানান, রোববার এ বিষয়ে সরকারের বক্তব্য বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হবে এবং পরবর্তীতে মার্কিন সরকারের সঙ্গে সিরিজ মিটিংয়ে বিষয়গুলো নিয়ে কথা হবে। প্রতিমন্ত্রী বলেন, অতীতের মতো রিপোর্টে একটা ধারাবাহিকতা আছে। একটা গৎবাঁধা বিষয় আছে। বাংলাদেশের সরকার বিরোধী যেসব প্রপাগান্ডা মেশিন আছে সে মেশিনগুলো থেকে তথ্যগুলো প্রাথমিকভাবে সংগ্রহ করা হয়েছে বলে আমার মনে হয়েছে। সেই মিডিয়া থেকে উদ্ধৃতি দেয়া হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ তিনি বলেন, সুইডেনে আশ্রিত তাসনিম খলিলের নামে একজনের বিরুদ্ধে সেই দেশের আরেকজন নাগরিক মামলা করেছেন। তিনি আওয়ামী লীগ করেন, তবে বাংলাদেশে। আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বিদেশে তার শাখা নিবন্ধিত হতে পারে না। কিন্তু সেটার দায়ভার বাংলাদেশ সরকারের ওপর চাপানো হচ্ছে। এখানে মৌলিক অনেক ভুল আছে।
রিপোর্টে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় অভিযুক্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের দায়মুক্তি দেয়ার বিষয়ে সরকারের অবস্থান জানতে চাইলে তিনি বলেন, র‌্যাবের ওপর স্যাংশন আসার পর আমরা এ সংক্রান্ত নথি দিয়েছি। আমরা এক সময় এসব ডকুমেন্ট দিতাম না। আমরা গত তিন বছরে কতজন পুলিশ, কতজন র‌্যাবের কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে সেই ডকুমেন্ট দিয়েছি। কিন্তু এখানে বলা হয়েছে দু’একটি ক্ষেত্রে। ১৯০ জনকে যখন চাকরিচ্যুত করা হয় তখন সেটা দু’একটি ঘটনার মধ্যে পড়ে না। পৃথিবীর সকল দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী চ্যালেঞ্জের মধ্যে দিয়ে যায়। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গতকালও অন্তর্দ্বন্দ্বে মানুষ মারা গেছে, প্রতিনিয়ত মারা যাচ্ছে। সেখানে আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যখন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে যাবে তখন যদি তাদের গুলি চালাতে হয়, কেউ যদি মারা যান তবে আমাদের ওপর তা চাপিয়ে দেয়া হবে- এই অবস্থান থেকে আমাদের বের হয়ে আসতে হবে। সমকামীদের জন্য বাংলাদেশে আইন নেই এবং বাংলাদেশ তাদের প্রয়োজন মেটাতে পারছে না- প্রতিবেদনের এই অংশের বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, এটা আমাদের ইসলাম ধর্মের পরিপন্থি। পৃথিবীর এমন একটা মুসলিম দেশ দেখান যারা সমকামিতাকে অনুমোদন দেয়। যত দেশ বা সংস্থা থেকে চাপ আসুক না কেন এলজিবিটি প্রশ্নে কোনো ছাড় দেবে না বাংলাদেশ। এটা বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে বিরোধিতা করা হবে, ধর্মের সঙ্গে বিরোধিতা করা হবে। প্রতিমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়ার মামলার ইতিহাসও এখানে নিয়ে আসা হয়েছে। তাকে রাজনৈতিক বন্দি বলা হয়েছে। তিনি তো রাজনৈতিক বন্দি নন। আমরা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে, কূটনৈতিকদের যতবার এ নিয়ে কথা বলেছি, সেখানে আমরা সকল প্রশ্নের উত্তর দিয়েছি। তাকে মানবিক কারণে জেল থেকে মুক্তি দিয়ে বাসায় থাকতে দেয়া হয়েছে। তার বিদেশে যাওয়ার প্রশ্নটাও অমূলক ছিল যখন দেখা গেল তিনি নিজের পায়ে হেঁটে বা হুইলচেয়ারে করে হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরেছেন। রোহিঙ্গাদের বিষয়েও ভুল তথ্য দেয়া হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, রোহিঙ্গা নিয়ে শেখ হাসিনার সরকার কতটা মানবিক, কতটা আন্তরিক। পৃথিবীর কেউ যদি রোহিঙ্গা প্রশ্নে মানবিকতা শেখাতে আসে আমাদের তবে আমার মনে তাদের নৈতিক স্খলন হয়েছে। আমরা সুনির্দিষ্ট একটা রিফিউজি ট্রিটি সিগনেটরি নই। আমরা সিগনেটরি না হওয়ার পরও ওই প্রটোকলে সবগুলো আমরা মানি। কিন্তু এখানে বলা হয়েছে, আমরা সিগনেটরি না হওয়ায় দায়িত্ব নিই না। এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা। ১০/১২ জন রোহিঙ্গা ভাসানচর থেকে অপ্রত্যাশিতভাবে পালানোর সময় সমুদ্রে ডুবে মারা গেছে। এটাও কি আমাদের দোষ? আমাদের ঘাড়ে এ দোষ চাপানো হয়েছে। প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা আশা করি আমাদের বন্ধুরা মাঠের বাস্তবতা ও চ্যালেঞ্জ বুঝবেন। আমাদের সংবিধান, সংস্কৃতি, ধর্ম, ভাষার প্রতি সম্মান দেখিয়ে দয়া করে যেন এলজিবিটি সম্প্রদায়ের দাবিগুলো বাংলাদেশের সামনে নিয়ে আসার চেষ্টা না করেন। দেশের নিরাপত্তা বাহিনীর ক্ষমতার অপব্যবহার নিয়ে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের প্রকাশিত রিপোর্টে তথ্য বিভ্রাট হয়েছে বলে মনে করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। রিপোর্টে প্রকাশিত অভিযোগ পুরনো বলেও দাবি করেন তিনি। গতকাল সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। মন্ত্রী বলেন, এ অভিযোগটা বোধহয় ২০২১ এর, ২০২২ এর নয়। ২০২১ এ যে পরিমাণ গুম-খুনের কথা এখানে বলা হচ্ছে, আমাদের রেকর্ডে কিন্তু সে পরিমাণ নেই। তিনি বলেন, আমরা সব সময়ই আমাদের নিরাপত্তা বাহিনীর দ্বারা যদি কেউ বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়, নিরাপত্তা বাহিনী আত্মরক্ষার ভয়ে যদি গুলিও করেন তাহলে প্রত্যেক ঘটনায় একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তদন্ত করেন। এতে যদি ঘটনার সত্যতা প্রমাণ হয় তাহলেই সেই বিষয়টি আমরা ক্লোজ করে দিই। আর যদি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মনে করেন এখানে ঘটনাটি অন্যায় বা অসতর্কতায় হয়েছে, এটা আমরা বিচার বিভাগে পাঠিয়ে দিই। মন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশে কেউই বিচারের ঊর্ধ্বে নয়। এখানে যে অন্যায় করে, তাকে বিচারের মুখোমুখি হতে হয়। মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট যেটা করেছে, তাদের তথ্য বিভ্রাট হয়েছে বলে আমি মনে করি। নিরাপত্তা বাহিনী রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার হচ্ছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। এ প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় থাকার সময় এটা হতো। পেছনের কথা যদি তারা বলে, এটা আমার জানা নেই। যখন থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের দায়িত্ব নিয়েছেন, তখন থেকে কোনো ধরনের অন্যায়-অত্যাচার নিরাপত্তা বাহিনী করলে সে কিন্তু আইনের মুখোমুখি হয়। আমি সেটাই বারবার স্পষ্ট করে বলছি। মন্ত্রী বলেন, গুম-খুনের কথা যেগুলো বলছেন, এগুলো প্রায়ই অনুসন্ধান করে আমরা দেখেছি। তারা অনেকেই হয়তো আত্মগোপন করে গুম বলে চালিয়ে দিয়েছে। হয়তো ব্যবসায়ে লস করে নিজেই কোথাও চলে গেছেন। এই কিছুদিন আগেও আপনারা দেখেছেন, এক লোক আড়াই বছর পর বলেছে ইচ্ছা করেই গুম হয়েছিল, পরিবারের অশান্তির কারণে। তিনি আরও বলেন, নিরাপত্তা বাহিনী অনেককেই খুঁজে বের করে দিয়েছে। আমি এখনো জোর গলায় বলতে পারি, যে রিপোর্টটা বের হয়েছে তাতে তথ্যের গরমিল রয়েছে। বিচার বিভাগ ব্যবহার করে রাজনৈতিক হয়রানি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বিচার বিভাগ যখন যে নির্দেশনা দিচ্ছে সব জায়গায় সেটি পালন হচ্ছে। বিচার বিভাগ স্বাধীন, হয়রানি হবে কীভাবে? পহেলা বৈশাখের নিরাপত্তা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, আমরা বলছি, যেহেতু কোভিড এখনো শতভাগ যায়নি। আমাদের প্রধানমন্ত্রী কিন্তু এখনো বাসা থেকেই সব কাজ করেন। কাজেই সবাইকে বলবো কোভিডের বিষয়টি মাথায় রেখেই তারা যেন এটাকে সীমিত আকারে করেন। দুপুর ২টা পর্যন্ত আয়োজনের বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মনে করেছে বলে তারা তাদের সুপারিশ করেছে। গুজব প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমাদের বিটিআরসি ফেসবুকের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলছে। আমরা কালও তাদের সঙ্গে এ নিয়ে আলাপ আলোচনা করেছি। তারা বলেছেন, ফেসবুকের সিঙ্গাপুরের প্রতিনিধিরা আমাদের এখান থেকে এসে ঘুরে গেছেন। একটা সুপারিশ যেটা আমরা করেছি তারা সেটার বাস্তবায়ন করবেন বলে আমাদের বলেছেন। এটুকু আমি বলতে পারি ফেসবুক সম্বন্ধে। আপনাদের মাধ্যমে আমি বলতে চাই, যারা ফেসবুকে এসব প্রচার করেন তাদের বিরুদ্ধে কিন্তু আমরা ব্যবস্থা নেই। কেউ যদি সংক্ষুব্ধ হয়ে বিচার চায় তাহলে আমরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা অবশ্যই নেবো। মানুষ এখন ধীরে ধীরে টের পাচ্ছে এসব গুজব ইচ্ছাকৃতভাবে ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। এ কারণে ফেসবুক কিন্তু এখন বিশ্বাসও করে না। মানুষ বিশ্বাসের আগে যুক্তিটা জানতে চায়। তথ্যটা জানতে চায়- যোগ করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

সূত্র : মানবজমিন।

error: