বিসিএ নির্বাচন নিয়ে গুরুতর অভিযোগ : জমা হয়নি প্রার্থীদের মনোনয়ন ফি

টেমসসুরমাডেক্স: ক্যাটারার্স এসোসিয়েশনের (বিসিএ) নির্বাচন নিয়ে উঠা বিভিন্ন অভিযোগের রেশ এখনো কাটেনি।এরমধ্যেই উঠলোআরো গুরুতর অভিযোগ। কথিত ওই নির্বাচনের দেড় মাস পার হয়ে গেলেও প্রার্থীদের মনোনয়ন ফি বিসিএ’র একাউন্টে জমাহয়নি। তাই প্রশ্ন উঠেছে- প্রার্থীরা কি আদৌ মনোনয়ন ফি জমা দিয়েছিলেন? দিয়ে থাকলে সেই অর্থ কোথায়? মনোনয়নেরযথযাথ প্রক্রিয়া ছাড়া কীভাবে সংশ্লিষ্টদের প্রার্থীতা বৈধতা পেল? নির্বাচন কমিশন কিসের ভিত্তিতে প্রার্থীদের তালিকা চূড়ান্ত করলেন?

গত ২৭ নভেম্বর লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব প্রশ্ন তোলেন বিসিএ নির্বাচনের প্রতিদ্বন্দ্বী‘ভিশন প্যানেল’। এই প্যানেল থেকে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী সাইদুর রহমান বিপুল, সেক্রেটারি জেনারেল পদপ্রার্থী হেলাল মালিকএবং চীফ ট্রেজারার পদপ্রার্থী সাইফুল আলমের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত এই সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বিসিএ’র একতরফা ওই কথিতনির্বাচনের মনোনয়ন ফরম ও ফি জমা দেয়ার শেষ তারিখ ছিলো ৫ অক্টোবর ২০২৩। নির্বাচন হয়েছে ১৫ অক্টেবর। নিয়মঅনুযায়ী নির্বাচন কমিশন প্রার্থীদের কাছ থেকে উপযুক্ত ফি-সহ মনোনয়নপত্র জমা নেয়ার কথা। ফি ছাড়া মনোনয়নপত্র জমানেয়ার নিয়ম বা সুযোগ কোনোটি নেই। প্রার্থীদের তালিকা চূড়ান্ত হওয়া পর্যন্ত মনোনয়ন ফি বাবদ প্রাপ্ত সমূদয় অর্থ ট্রাস্টি হিসেবেপ্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে থাকার কথা। প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত হওয়ার পর নির্বাচন কমিশন ওই অর্থ বিসিএ নেতৃবৃন্দকেবুঝিয়ে দেবেন। আর নেতৃবৃন্দ দ্রুততম সময়ে সেই অর্থ বিসিএ’র ব্যাংক একাউন্টে জমা রাখবেন। এটাই স্বাভাবিক এবং বৈধনিয়ম। চূড়ান্ত কথা হচ্ছে- উপযুক্ত ফি ছাড়া মনোনয়নপত্র জমা নেয়ার সুযোগ নেই। মনোনয়ন ফি না দিয়ে নির্বাচনে প্রার্থীহিসেবে গণ্য হওয়ারও সুযোগ নেই। কিন্তু ওই নির্বাচনের পর প্রায় ৬ সপ্তাহ সময় পার হয়ে গেলেও প্রার্থীদের মনোনয়ন ফি-এরকোনো হদিস নেই।

এতে বলা হয়, বিদায়ী কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট টিপু রহমান কথিত নির্বাচনের একমাত্র অংশগ্রহণকারী ‘সাফরন প্যানেল’ থেকে চীপ ট্রেজারার প্রার্থী ছিলেন। তিনি গণমাধ্যমে দাবি করেছিলেন, তাদের প্যানেল থেকে ৬৯ হাজার পাউন্ড মনোনয়ন ফিবাবদ জমা দেয়া হয়েছে।

নির্বাচন আয়োজন ও পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন বিসিএ’র বিদায়ী প্রেসিডেন্ট এম এ মুনিম এবং প্রধান নির্বাচন কমিশনারমাহমুদ হাসান এমবিই। তাঁদের উদ্দেশে প্রশ্ন রেখে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়- “নিয়ম-কানুনের তোয়াক্কা না করে কেবল একটিপক্ষকে যেনতেনভাবে বিজয়ী ঘোষণাই কি তাদের কাজ ছিলো? তাঁরা কি বিসিএ-কে মগের মুল্লুক পেয়েছেন? বিসিএ’র সম্মানিতসদস্যদের চাওয়া-পাওয়ার কোনো মূল্যই কি তাঁদের কাছে নেই?”

এর আগে গত ১৯ অক্টোবর এক সংবাদ সম্মেলনে বিসিএ নির্বাচন নিয়ে নানা অন্যায় ও অনিয়মের অভিযোগ তুলে সংবাদসম্মেলন করেছিলো ‘ভিশন প্যানেল’। একের পর এক অন্যায়, স্বেচ্ছাচারিতা এবং পক্ষপাতিত্বমূলক আচরণের মাধ্যমে বিদায়ীপ্রেসিডেন্ট এম মুনিম ভিশন প্যানলকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ দেননি বলে অভিযোগ করেছিলেন তারা। তারা অভিযো্গকরেন- গত ১৫ অক্টোবর বিসিএ’র বিদায়ী প্রেসিডেন্ট এম এ মুনিমের নেতৃত্বে বিসিএ’র যে এজিএম ও নির্বাচন করা হয়েছে।যেখানে সংগঠনের সংবিধানের কোনো তোয়াক্কা করা হয়নি। এজিএম-এর কোরাম পূর্ণ হয়নি। ভোট দেননি আমাদের প্রানপ্রিয়সংগঠন বিসিএ’র কোনো সদস্য। কিন্তু সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে এবং গায়ের জোরে একটি কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে।

সাধারণ সদস্যদের ২০২২-২৩ অর্থ বছরের কোনো আয়-ব্যায়ের কোনো হিসাব দেয়া হয়নি জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বিদায়ী প্রেসিডেন্ট এম এ মুনিম জোরপূর্বক চীপ ট্রেজারের দায়িত্ব কেড়ে নেন। তিনি মেম্বারশিফ ফি এবং মনোনয়ন ফি-এরহিসাব দেয়ার কথা। কিন্তু সেটি না করে তিনি অন্যায়ভাবে নিজের পছন্দের লোকদের দায়িত্ব দিয়ে সরে যেতে চাইছেন।

তারা অভিযোগ করেন, বিদায়ী প্রেসিডেন্ট এম এ মুনিমের পছন্দের ঘোষিত অবৈধ কমিটি ইতিমধ্যে ন্যাশনাল এক্সিকিউটিভকমিটি (এনইসি) গঠন করেছে জানিয়ে তারা বলেন, অবৈধ কমিটি অনেককে এনইসি’তে যুক্ত করেছে যারা এনইসিতে যুক্তহওয়ার সাংবিধানিক যোগ্যতা পূরণ করেননি। বলেন, “অবৈধ কমিটির ডাকা এনইসি সভায় বিসিএ’র একাউন্ট থেকে এম এমুনিম ৫ হাজার পাউন্ড, অলি খান ৫ হাজার পাউন্ড ও মিঠু চৌধুরী ১ হাজার পাউন্ডের চেক তাদের নিজ নামে নিয়ে গেছেন।সম্প্রতি এই চেকগুলো বিসিএ’র একাউন্ট থেকে ক্লিয়ার হয়ে গেছে। এম এ মুনিম- এর আগেও নিজ নামে বিসিএ থেকে চেক নিয়েগেছেন। এসব অর্থের হিসাব জানার আইনগত অধিকার রয়েছে প্রতিটি সদস্যের।”

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, “একটি চক্র ক্যাটারার্সদের অভিভাবক সংগঠন বিসিএ-কে কুক্ষিগত করে রাখতে চায়। একের পর একঅনির্বাচিত নেতৃত্ব চাপিয়ে দেয়া হয়েছে বিসিএ-তে। তাঁরা বিসিএ-কে নিজেদের আত্মপরিচয়ের সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করেছেন।কেউ কেউ আদায় করে নিয়েছেন বড় বড় খেতাব। কিন্তু এই সংগঠনের নেতৃত্ব নির্বাচনে সাধারণ সদস্যরা নিজেদের ভোটটিওদিতে পারেন না। এই চক্রের বৈষম্যমূলক আচরণ ও অন্যায়ের শিকার হয়ে আমাদের কমিউনিটির সম্মানিত অনেকে বিসিএছেড়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন। এবারের নির্বাচনকে ঘিরে আমাদেরও একই ফাঁদে ফেলা হয়েছে। কিন্তু আমরা বিসিএ ছেড়ে যাবো না।বিসিএ আমাদের সংগঠন। সাধারণ সদস্যদের সংগঠন। এই সংগঠনের বৈধ নেতৃত্ব এবং সাংবিধানিক পরিচালনার জন্যআমরা লড়াই করে যাবো।”

অবিলম্বে কথিথ ওই এজিএম ও নির্বাচন বাতিল চাওয়া হয় সংবাদ সম্মেলনে। একই সঙ্গে অনির্বাচিত অবৈধ কমিটিকে বিসিএপরিচালনার নেতৃত্ব থেকে বিরত থাকার আহবান জানানো হয়।

বিসিএ’র নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত জানিয়ে তাঁরা বলেন,“নির্বাচনকে ঘিরে যেসব তুঘলকি কাণ্ড ঘটেছে- আমরা চাইলেই আইনের আশ্রয় নিতে পারি। কিন্তু এতে আমাদের সংগঠন ক্ষতিগ্রস্থ হবে। অতীতে এমন নজির রয়েছে। তাইআমরা আলোচনার মাধ্যমে সমস্যাগুলোর সমাধানের পক্ষে। কিন্তু দ্রুত এর সমাধান না হলে আমরা আমাদের প্রাণপ্রিয়সংগঠনের কল্যাণ এবং সাধারণ সদস্যদের অধিকার সুরক্ষায় আইনগত ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবো। সেক্ষেত্রে বিসিএ এবংআমাদের সকল ক্ষয়-ক্ষতির দায়ভার বিদায়ী প্রেসিডেন্ট এম এ মুনিমকে নিতে হবে। আশা করছি সংশ্লিষ্টদের শুভবুদ্ধির উদয়হবে।”

error: