বিয়ানীবাজার ক্যান্সার ও জেনারেল হাসপাতাল চ্যারিটির কমিউনিটি এলায়েন্স ইভেন্ট অনুষ্ঠিত ।

বিয়ানীবাজার ক্যান্সার ও জেনারেল হাসপাতাল চ্যারিটির কমিউনিটি এলায়েন্স ইভেন্ট অনুষ্ঠিত হয়েছে। ৮ এপ্রিল বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে আটটায় ভার্চুয়াল মাধ্যম জুম এ পরিচালিত অনুষ্ঠানে ব্রিটেনের কমিউনিটির বিশিষ্টজন সহ বিয়ানীবাজার ক্যান্সার ও জেনারেল হাসপাতালের ট্রাস্ট্রিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

টিভি প্রেজেন্টার ও চ্যানেল এস এর হেড অফ প্রোগ্রাম ফারহান মাসুদ খাঁন এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিবিসিজিএইচ এর চেয়ারম্যান আলহাজ্ব সামছ উদ্দিন খাঁন। পবিত্র কোরআন থেকে পাঠ করেন আবু কাওছার।

প্রবীন রাজনীতিবিদ, শিল্পপতি, বিশিষ্ট সমাজসেবক, শিক্ষানরাগী ও কমিউনিটি নেতা আলহাজ্ব সামছ উদ্দিন খাঁন বিয়ানীবাজার ক্যান্সার ও জেনারেল হাসপাতাল এর প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকে এখন পর্যন্ত সকলের সহযোগিতার জন্য আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, বিশেষ করে ব্রিটিশ- বাংলাদেশীদের অর্থায়নে প্রতিষ্ঠিত এই হাসপাতালটি সকলের সহযোগিতায় একটি মডেল হাসপাতাল হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করতে আমরা নিরলস কাজ করে যাচ্ছি।

বিয়ানীবাজার ক্যান্সার ও জেনারেল হাসপাতাল ব্রিটেন প্রবাসীদের গর্বের একটি চ্যারেটি প্রতিষ্ঠান হিসাবে গড়ে তুলতে সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন উল্লেখ করে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান সামছ উদ্দিন খাঁন বলেন, আমাদের বিশ্বাস অতীতের মতো আপনারা আমাদের পাশে থাকবেন।

হাসপাতালের চ্যারিটি কাজের বর্তমান কার্যক্রম নিয়ে বক্তব্য রাখেন, হাসপাতালের সিইও এম সাব উদ্দিন। তিনি বলেন, ২০০৮ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত আমাদের কার্যক্রমে ব্রিটেন প্রবাসীদের অবদান রয়েছে।

২০১৫ সালে আমরা সেবামূলক সার্ভিস শুরু করি। এবং গত ২০ ফেব্রুয়ারী সেবা কার্যক্রমের ৬ বছর পূর্তি উদযাপন করা হয়েছে।

সিইও এম সাব উদ্দিন প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে ট্রাস্টিবৃন্দের নিরলস পরিশ্রমকে কৃতজ্ঞতায় স্বরণ করে বলেন, বর্তমানে আমরা ক্যান্সার চিকিৎসার পাশাপাশি জেনারেল চিকিৎসা সেবাও প্রদান করছি। পুওর ফান্ডের মাধ্যমে দুস্থ ও সুবিধা বঞ্চিতদের সেবা দেয়া হচ্ছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের যে কোন স্থান থেকে রোগীরা এই হাসপাতাল থেকে সেবা নিতে পারবেন। হাসপাতালের হেল্প ডেস্ক থেকেও রোগীরা বিভিন্ন তথ্য ও প্রয়োজনীয় সেবা নিতে পারবেন।

সিইও এম সাব উদ্দিন ব্রিটেনের প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিকস মিডিয়ার সহযোগিতার কথা উল্লেখ করে তার সকলের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন।

বিবিসিজিএইচ এর বিগত বছরগুলোর নানা সেবামূলক কাজের তথ্য উপস্থাপন করেন ট্রাস্টি আব্দুল ছামাদ। তিনি জানান,২৫,০০০ পাউন্ড দিয়ে ট্রাস্টি হয়ে হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম শুরু হয়। হাসপাতালে ২০১৫ সাল থেকে এখন পর্যন্ত মোট ৪০,৬০০১ জন জেনারেল রোগী দেখা হয়। ক্যান্সার রোগের চিকিৎসা নিয়েছেন ১০৮৩ জন রোগী। শুধুমাত্র কোভিডকালীন সময়ে বিনামূল্যে হাসপাতাল থেকে ১২০০০ রোগীকে চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়েছে।

এসময় ট্রাস্টি আব্দুল ছামাদ স্বাস্থ্য সেবায় সকল কর্মকতা এবং চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ প্রকাশ করে সভায় করতালির মাধ্যম তাদের প্রতি ধন্যবাদ জানানোর অনুরোধ করলে সকলে স্বতস্ফুর্তভাবে অংশনেন।

বিবিসিজিএইচ এর সিনিয়র মেডিক্যাল ডাইরেক্টর ডা: কবির মাহমুদ কোভিড সময়ের সেবা প্রদান এর বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরে বলেন, আমরা ক্যান্সারে আক্রান্তদের চিকিৎসা সেবা প্রদানেও নিয়েছি বাস্তবধর্মী প্রদক্ষেপ। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে তাদের চিকিৎসা সহায়তা করা হচ্ছে। বর্তমানে বিভিন্ন অঞ্চলের ১৮জন ক্যান্সার রোগী বিবিসিজিএইচ থেকে সেবার জন্য অপেক্ষায় আছেন।

কোভিড সময়ের শুরু থেকে হাসপাতালটি দিনরাত যে সেবা সার্ভিস দিয়ে আসছে তা বর্তমানেও অব্যাহত থাকবে। এইসকল সেবা কার্যক্রম ব্রিটেন থেকে সরাসরি মনিটর করা হয় বলেও তিনি জানান।

বিবিসিজিএইচ এর মার্কেটিং ডাইরেক্টর ফরহাদ হোসেন টিপু বলেন, আমরা কৃতজ্ঞচিত্তে বলি যে, এই প্রতিষ্ঠানটি ব্রিটিশ- বাংলাদেশীদের অন্যতম আইকনিক প্রতিষ্ঠান। অবস্থানগত কারণে হয়তো এটি বিয়ানীবাজার উপজেলায় স্থাপিত হয়েছে। কিন্তু এটা ব্রিটিশ -বাংলাদেশীদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত সমগ্র বাংলাদেশীদের প্রতিষ্ঠান।

তিনি বলেন, আপনারা জেনে খুশী হবেন , হাসপাতালটির প্রথম সেবা গ্রহনকারী রোগী এবং প্রথম ক্যামোথেরাপী নেয়া রোগীর বাড়িও বিয়ানীবাজার অঞ্চলের নয়।

চ্যানেল এস এর চেয়ারম্যান আহমেদ উস সামাদ চৌধুরী জেপি বক্তব্যে বলেন – প্রায় ৬ বছর আগে আমরাও অনেকের সমালোচনা শুনেছি- এটা করা সম্ভব না। কিন্ত বর্তমানে তা সম্ভব হয়েছে। চ্যানেল এস সব সময় এই এই হাসপাতালের সাথে আছে। আমি বিশ্বাস করি, ব্যয়বহুল এই চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাওয়া প্রতিষ্ঠানটি ধীরে ধীরে আরও বিরাট জনগোষ্টির দোড়গোড়ায় পৌছে যাবে।

বিজনেস লীডার ও বিসিএ’র সাবেক প্রেসিডেন্ট পাশা খন্দকার বিবিসিজিএইচ কে ব্রিটিশ বাংলাদেশী কমিউনিটির জন্য একটি উজ্জ্বল উদাহরণ উল্লেখ করে বলেন, ব্রিটেনের দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রজন্ম’র কাছে এই হাসপাতালের কার্যক্রম ও আগামী দিনের পরিকল্পনা তুলে ধরা খুব জরুরী। তাহলে এর সুফল সহজে পাওয়া যাবে।

বিশিষ্ট কমিউনিটি সংগঠক ও সাংবাদিক কে এম আবু তাহের চৌধুরী বলেন, এই প্রজেক্টটি বাংলাদেশে কমিউনিটির সেবার অন্যতম উদাহরণ। এটা একটি ইউনিক প্রজেক্ট, যা সারা বাংলাদেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করবে।

ক্যানারী ওয়ার্ফ এর এসোসিয়েট ডাইরেক্টর জাকির খান বলেন, আমাদের ব্রিটিশ –বাংলাদেশী প্রজন্মদের সম্পৃক্ত করা খুব জরুরী। এজন্য আমাদের সকলের সহযোগিতা করা উচিত মনে করে তার অবস্থান থেকে সকল ধরণের সহযোগিতার আশ্বাস দেন।

ব্রেন্ড কাউন্সিলেরর সাবেক মেয়র, কাউন্সিলার পারভেজ আহেমেদ তার বক্তব্যে সেবামূলক এই প্রতিষ্ঠানে নতুন প্রজন্মদের সম্পৃক্ত করতে আমাদের পরিবার এবং কমিউনিটির সকল স্তরের যার যার অবস্থান থেকে এগিয়ে আসা উচিত বলে মনে করেন।

সাপ্তাহিক জনমত সম্পাদক সৈয়দ নাহাস পাশা তার বক্তব্যে এই হাসপাতালকে নিয়ে শুরুতে অনেকের সন্দেহ থাকলেও এই সময়ে যে অবস্থানে এসেছে, তার জন্য পরিচালনা পরিষদ কে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, এধরণের প্রজেক্টে সকলের আরও সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেয়া উচিত । বিশেষ করে কোভিডকালীন সময়ে হাসপাতাল যেভাবে কাজ করছে তা অনুকরণীয়।

টাওয়ার হ্যামলেটস এর সাবেক ডেপুটি মেয়র ওহিদ আহমদ বিবিসিজিএইচ থেকে একজন দুস্থ ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা গ্রহনের অভিজ্ঞতা উল্লেখ করে বলেন- কর্তৃপক্ষ অত্যন্ত আন্তরিকভাবে শুধু চিকিৎসা সেবা প্রদান করেননি । এই রোগীর উচ্চ চিকিৎসায় যা যা করণীয় সকল বিষয়ে সহায়তা করেছেন। যা নিজে না পেলে হয়তো বিশ্বাস হতো না। তিনি সকলকে মানবিক কাজে এগিয়ে আসা্র আহবান জানান।

টাওয়ার হ্যাসলেটস এর স্পিকার কাউন্সিলার আহবাব হোসেন বিয়ানীবাজার ক্যান্সার ও জেনারেল হাসপাতালকে মানব সেবার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত উল্লেখ করে বলেন, সাধারণ মানুষ ও মানবতার জন্য যে দৃষ্টান্ত রেখেছেন তা আজীবন থাকবে। এই হাসপাতাল আমাদের সকলের হাসপাতাল। আমরা এই প্রতিষ্ঠানের জন্য সকলে এক সাথে কাজ করতে চাই – টুগেদার উই ক্যান এ্যাচিভ এ্যাভরিথিং।

ইউকেবিবিসিআই এর ডাইরেক্টর রহিমা মিয়া হাসপাতালটির প্রতি তার সমর্থন জানিয়ে বলেন, প্রতিষ্ঠানের সেবার ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে সকলের সহযোগিতা গুরত্বপূর্ণ । তিনি ব্রিটিশ – বাংলাদেশী বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ত করার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করেন।

মা ও শিশু স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও নিউজ ব্রডকাস্টার ডা: রেজওয়ানা আনোয়ার একজন ডাক্তার হিসাবে তার অবস্থান থেকে সর্বাত্নক সহায়তায় আশ্বাস দিয়ে বলেন, বিবিসিজিএইচ চিকিৎসা সেবায় তিনটি ইউনিক কাজ করছে। প্রথমত প্রাইমারী হেলথ কেয়ার,দ্বিতীয়ত সেকেন্ডারী এবং বিশেষ রোগীদের রেফারেল সার্ভিস । এটা একটি বিরাট বৈশিষ্ট, সব হসপিটালে কিন্ত এসব থাকে না। এছাড়াও কোভিডকালীন সময়ে প্রতিষ্ঠানটি খোলা রেখে সেবা দিয়ে যাচ্ছে। যা বাংলাদেশে সত্যিকার অর্থেই একটি ইউনিক প্রজেক্ট ।

জালালাবাদ এসোসিয়েশন এর সভাপতি মুহিবুর রহমান মুহিব বলেন, একদিন এটি একটি পূর্ণাঙ্গ হাসপাতাল হিসাবে প্রতিষ্ঠা পাবে। এজন্য তিনি কমিউনিটির সকলের সাথে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।

চ্যানেল এস এর চীফ রিপোর্টার মোহাম্মদ জুবায়ের দেশের সেরা ডাক্তারদের নিয়ে বিবিসিজিএইচ এর কাজ করার দিকটি তুলে ধরে বলেন- এইধারা শুরুতেই প্রতিষ্ঠানটি করতে পেরেছে। যা অনেক প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে বড় একটি চ্যালেঞ্জ ।

সভার শেষ অংশে বিবিসিজিএইচ এর পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে হাসপাতালের ফান্ডরাইজিং ডাইরেক্টর আব্দুস শফিক আগামী ১৬ রামাদান চ্যানেল এস এর ফান্ডরাইজিং এ সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।

অনুষ্ঠানে বিশিষ্টজনদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন ড. হাসনাত এম হোসেইন এমবিই, বিসিএর সিনিয়র সহ সভাপতি যথাক্রমে জামাল উদ্দিন মকদ্দস,মানিক মিয়া ও ওলী খান এমবিই, সেক্রেটারী জেনারেল মিঠু চৌধুরী, বিবিসিএ এর সেক্রেটারী জেনারেল তফজ্জুল মিয়া ও চীফ ট্রেজারার মতিন মিয়া, ক্যাটারার্স আনা মিয়া, এমদাদ রহমান, দেশ পত্রিকা সম্পাদক তাইছির মাহমুদ, ৫২বাংলা সম্পাদক আনোয়ারুল ইসলাম অভি ,চ্যানেল এস এর সিনিয়র রিপোর্টার ইব্রাহিম খলিল,অনুপম নিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকম সম্পাদক সাংবাদিক মুহিব চৌধুরী, সংগঠক আফাজ উদ্দিন,বেলাল বদরুল ও মো. চৌধুরী প্রমূখ।

বিবিসিজিএইচ এর ট্রাস্টিবৃন্দের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, আব্দুল করিম নাজিম, ব্যারিষ্টার নাছির উদ্দিন,আলী আব্দুল রউফ, মানজুরুস সামাদ চৌধুরী, বাজিদুর রহমান, মোহাম্মদ আজিজুর রহমান, মেসবা আহমেদ, ওহিদ উদ্দিন, নাসির উদ্দিন,আল মামুনুর রশিদ হিলারী ও জাহিদ রহমান।

অনুষ্ঠানের সভাপতি বিবিসিজিএইচ এর চেয়ারম্যান আলহাজ্ব সামছ উদ্দিন খাঁন তার সমাপনী বক্তব্যে সকলের অবদানের জন্য কৃতজ্ঞতা এবং আগামীতে আরও সহযোগিতা করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন।

error: