ভারতের হাসপাতালে আর জায়গা নেই

হন্যে হয়ে খোঁজাখুঁজির পরে একটি হাসপাতালে শয্যার সন্ধান মিলেছিল স্বাস্থ্য দফতরের ওয়েবসাইটে। কিঞ্চিৎ আশা জেগেছিল করোনা-আক্রান্ত বৃদ্ধের স্বজনের মনে। কিন্তু মিনিট দশেক পরেই চূড়ান্ত হতাশা গ্রাস করল তাঁদের। তাঁরা জানতে পারলেন, সেখানেও কোনও শয্যা ফাঁকা নেই!

শুক্রবার শয্যা-সঙ্কটের এই ছবি দেখা গেল কলকাতার বেশ কিছু জায়গায়। বাকি জেলাগুলিতে রোগীর চাপ এখনও তুলনায় কম। তবু পরিস্থিতি বুঝে সেখানে চেষ্টা হচ্ছে শয্যা বাড়ানোর। খোলা হচ্ছে সেফ হোম। আসলে কোভিড সংক্রমণের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সঙ্কটজনক রোগীর সংখ্যা। সেই সঙ্গেই তীব্রতর হচ্ছে হাসপাতালে শয্যার সঙ্কট। স্বাস্থ্যকর্তাদের ফোন মুর্হুমুহু বাজছে। শয্যার খোঁজে। প্রত্যেকেই চাইছেন শয্যার সন্ধান। কিন্তু প্রায় কাউকেই তা দিতে পারছেন না কর্তারা। ‘‘আমাদের খুব অসহায় লাগে, যখন কিছু করতে পারি না। ওয়েবসাইটে যত শয্যা প্রদর্শিত হয়, তা রিয়েল টাইমের পরিসংখ্যান নয়। কারণ, পরিস্থিতি এমনই যে, প্রতি মুহূর্তে শয্যা খালি-ভর্তির সংখ্যা বদলাচ্ছে।’’— বললেন এক স্বাস্থ্যকর্তা। পরিস্থিতি এমন যে, হাসপাতালের ওয়েটিং লিস্টে নাম লিখিয়েই আপাতত সান্ত্বনা খুঁজছেন বহু রোগীর আত্মীয়-পরিজন।

কিন্তু এমন সান্ত্বনায় শেষমেশ রোগীর কতটা উপকার হয়, তা নিয়ে সংশয়ে আছেন চিকিৎসকেরাই। আইএলএস হাসপাতাল গোষ্ঠীর ভাইস প্রেসিডেন্ট দেবাশিস ধর বলেন, ‘‘যে-রোগীর এখনই আইসিইউ লাগবে, তাঁকে ওয়েটিং লিস্টে রেখে পরের দিন ডাকলে কি কাজ হবে? নাম তুলে রাখা হল, এটুকুই সান্ত্বনা মাত্র!’’ শয্যার অভাবের বিষয়ে প্রশাসনের শীর্ষ কর্তারাও পুরোপুরি ওয়াকিবহাল। তাঁদের আবেদনে বেশ কিছু বেসরকারি হাসপাতালে শয্যা বাড়ানো হলেও সুরাহা বিশেষ হচ্ছে না। এক চিকিৎসক বলেন, ‘‘প্রতিদিন যত রোগী আক্রান্ত হচ্ছেন, তার অন্তত ১০ শতাংশের অবস্থা সঙ্কটজনক। এত রোগীকে পরিষেবা দেব কী ভাবে?’’

গত বার কোনও সঙ্কটজনক রোগী আইসিইউয়ে ৩-৪ দিন থাকতেন। এখন সেটাই ৭-৮ দিন হচ্ছে। ফলে শয্যা-সমস্যা আরও বেড়েছে বলে জানাচ্ছেন ডিসান হাসপাতালের ডেপুটি এমডি তাপস মুখোপাধ্যায়। আবার পিয়ারলেস হাসপাতালের কর্তা সুদীপ্ত মিত্র বলেন, ‘‘৬২টি করোনা শয্যার সব ভর্তি। জরুরি কয়েকটি শয্যা রাখা রয়েছে, তা-ও খালি থাকছে না। ইতিমধ্যে অপেক্ষমাণের তালিকায় উঠেছে আরও ৭২ জনের নাম।’’

error: