এ নির্বাচন কারো কাছে গ্রহনযোগ্য হবে না

গণঅধিকার পরিষদের একাংশের আহ্বায়ক ড. রেজা কিবরিয়া বলেছেন, সরকার একটি একতরফা নির্বাচন করে ক্ষমতায় টিকে থাকার চেষ্টা করছে। কিন্তু এই নির্বাচন দেশে-বিদেশে কারও কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। মানবজমিনের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, এটা কোনো নির্বাচন নয়। এটা একটা প্রতারণা। এই নির্বাচনে যারা অংশগ্রহণ করছে, তারা চিরকালের জন্য মীরজাফর এবং দালালে পরিণত হবে। যারা সংসদ সদস্য হওয়ার জন্য মনোনয়ন নিয়েছে আমরা জানবো তারা প্রত্যেকেই দালাল। আওয়ামী লীগের দলের যারা আছে তারাও দালাল। বাকি যারা আছে তারাও দালাল। দালাল হিসেবে, মীর জাফর হিসেবে আমাদের চিহ্নিত হওয়ার কোনো ইচ্ছা ছিল না। তাই আমরা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি না। তিনি বলেন, এটা ২০১৪ সালের নির্বাচনের চেয়েও বাজে নির্বাচন হবে।

দেশে এবং বিদেশে ইতিমধ্যে এই নির্বাচন আয়োজনকে ধিক্কার দিচ্ছে। আমি আশা করি, জনগণ এটাকে প্রত্যাখ্যান করবে। জনগণের প্রতি আমার আহ্বান হচ্ছে- কেউ যেন এই পাতানো ও প্রতারণার নির্বাচনে না যায়। তারা যেন ভোটকেন্দ্রে গিয়ে তাদের সময় নষ্ট না করেন। ভোটে জনগণকে টানার জন্য অনেকে টাকা ছড়াচ্ছেন। আমি জনগণকে বলবো, আপনারা টাকা নিয়েছেন ভালো কথা। কিন্তু এই প্রতারণার ভোটে যাওয়ার দরকার নাই। আপনারা মনে করেন, আপনাদের কাছ থেকে যে টাকা চুরি করা হয়েছিল, তার কিছু অংশ ফেরত পেলেন। যারা এই ভোটে অংশ নিচ্ছে আমি তাদের পরিবারের সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানাবো- তারা যেন তাদের প্রতি নিন্দা প্রকাশ করে। 

প্রধান নির্বাচন কমিশনারের প্রতি আহ্বান জানাই অবিলম্বে এই প্রতারণামূলক নির্বাচনের তফসিল বাতিল করতে হবে। যদি তারা তা না করেন, তাহলে ভবিষ্যতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্য কমিশনার যারা রয়েছেন এদের কাছ থেকে আমরা এই ক্ষতিপূরণ আদায় করবো। যারা গরিব মানুষের করের টাকা এই পাতানো নির্বাচন আয়োজনের নামে নষ্ট করছে তার ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। এই কমিশন যদি জনমতের বিপক্ষে গিয়ে এই নির্বাচন আয়োজন করে তাহলে ভবিষ্যতে এদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে। 

বিরোধী দলগুলোর আন্দোলন সফল হওয়া নিয়ে আপনি কতোটা আশাবাদী- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে যে আন্দোলন হয়েছিল, সেটিও রাস্তায় সমাধান হয়নি। হিটলারের বিরুদ্ধে যে অন্দোলন হয়েছিল সেটিও রাজপথে ফয়সালা হয়নি। সাদ্দাম হোসেনের যেভাবে পতন হলো- সেটি নিয়ে বলা যায়, সাদ্দামের বিরুদ্ধে রাস্তায় মিছিল হয়নি। এখন আমাদের এখানে যে ধরনের স্বৈরাচার রয়েছে, তার বিরুদ্ধে মানুষ রাস্তায় নামতে ভয় পাবে এটাই স্বাভাবিক। আমার ধারণা এই সরকারের, প্রশাসনের অনৈতিক চেষ্টা সব কলাপস হবে। আমার বিশ্বাস, সাহসী এবং দেশপ্রেমিক লোক পুলিশে এবং প্রশাসনে এখনো রয়েছে। তারা নিশ্চয়ই এটা ভেবে দেখবেন, এই ভাবে একটি দলের প্রধানের নির্দেশমতো দেশকে ধ্বংসের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াটা ঠিক হবে কিনা? যারা এই দেশে থাকবেন, তারা নিশ্চয়ই এটা নিয়ে ভাববেন। আর যারা কানাডা, আমেরিকায় চলে যাবেন তাদের কথা আলাদা। অনেকেই কানাডায় বউ-বাচ্চা পাঠিয়ে দিয়েছেন। নিজেরা সুযোগ বুঝে চলে যাবেন। যারা এই দেশে থাকবেন, তারা নিশ্চয়ই এটা ভেবে দেখবেন এই সরকারের বেআইনি হুকুম তারা মানবেন কিনা? তিনি বলেন, ৭ই জানুয়ারির নির্বাচনের দিকে সরকারের এখন সকল প্রস্তুতি। বিরোধী যারা রয়েছেন, তারা এখন মাঠে রয়েছেন। পরের কর্মসূচি নিয়ে পরিকল্পনা কী জানতে চাইলে রেজা কিবরিয়া বলেন, সরকার একতরফা নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। ২০১৮তে নির্বাচনের সময়ে বিরোধীদের যেভাবে দেখা গিয়েছিল, এবার তার চেয়ে ভিন্নভাবে দেখা যাবে। এখন চলমান আন্দোলনে বিএনপি বড় বিরোধী দল। বিএনপি নিশ্চয়ই এই একতরফা পাতানো নির্বাচনের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে একত্রিত করার উদ্যোগ নিবে। দলটির বেশির ভাগ নেতাকে জেলে আটক রাখা হয়েছে। তারপরেও জনগণকে সঙ্গে নিয়ে মোকাবিলা করার পরিকল্পনা নেয়া হবে। 

সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর একই প্ল্যাটফরমে আন্দোলন শুরুর কোনো পরিকল্পনা রয়েছে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখন যেভাবে যুগপৎ চলছে আপাতত সেভাবেই চলবে। একই প্ল্যাটফরমে সবাই আসবে কিনা সেটি এখনো মীমাংসিত নয়। 
সম্প্রতি আইএমএফের ঋণের টাকা পাওয়া গেল। দেশের কমতে থাকা রিজার্ভ, বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা, ডলার সংকট, পোশাক ব্যবসায়ীদের উদ্বেগের খবর প্রকাশিত হয়েছে। এই বিষয়ে তিনি বলেন, আইএমএফ বাংলাদেশকে ঋণ দিয়েছে। আমি মনে করি, এই ঋণটি দরকার ছিল। বাংলাদেশ ঋণটা পেয়েছে। আইএমএফকে আমি ধন্যবাদ জানাতে চাই। আইএমএফের লোন দেয়ার পরে অন্য অনেক সংস্থা লোন দেয়। এই লোন দেয়ার পরে এই সরকারের অনেক লাভ হয়েছে। তাই বলে আন্তর্জাতিক মহল যে তাদের পক্ষে চলে গেছে- এটা যেন তারা না ভাবে। একটা দেশের অর্থনৈতিক ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য আইএমএফের লোন দেয়া হয়। ভবিষ্যতে যে সরকার আসবে, তাদের জন্য বিপদ তৈরি করার তো দরকার নাই। যারা লোন দিয়েছে, তারা বলছেন, এখন বাংলাদেশের একটা ক্রিটিক্যাল স্টেজ। যদি এখন লোন দেয়া না হয়, তাহলে বাংলাদেশ একটা সমস্যায় পড়বে। তাই এই লোনটি দেয়া হয়েছে। আমি আইএমএফকে স্বাগত জানাই। আর যদি বাংলাদেশে কোনো বাণিজ্য অবরোধ আসে তাহলে অবস্থা খুবই শোচনীয় হয়ে যাবে। বাংলাদেশের পোশাক খাতের কথা নতুন করে বলার কিছু নেই। পাশাপাশি আমাদের অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা কোন কোন সেক্টরে হবে তা আমরা এখনো বুঝতে পারছি না। যদি ব্যাংকে বিনিময়ে নিষেধাজ্ঞা আসে তাহলে কোনো লেনদেন করা যাবে না। আন্তর্জাতিক ব্যাংকিং ব্যবস্থার সঙ্গে কোনো লেনদেন থাকবে না। এটা খুবই মারাত্মক প্রভাব পড়বে। যদি ডলার লেনদেন বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে যে জটিলতা তৈরি হবে তা সমাধান করার মতো সক্ষমতা বাংলাদেশের নাই।

সূত্র: মানবজমিন

error: